বাল্যবিবাহ রুখতে শিবির বহরমপুরে

মেয়ের মায়ের কোলে শিশু। মেয়ের কোলেও শিশু। এমনকী নাতনির কোলেও শিশু! তখন কে যে মা, কে মেয়ে আর কে নানিমা বুঝতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে যায়। বাল্য বিবাহের কারণে মুর্শিদাবাদ জেলায় এমন দৃশ্য হামেশাই চোখে পড়ে। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে শনিবার বহরমপুরে আইসিআই স্কুলের সভাকক্ষে ইমান ও কাজিদের নিয়ে একটি আলোচনা সভায় এমনটাই বলছিলেন বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মৌলানা আতিউর রহমান।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২১
Share:

চলছে শিবির। নিজস্ব চিত্র।

মেয়ের মায়ের কোলে শিশু। মেয়ের কোলেও শিশু। এমনকী নাতনির কোলেও শিশু!

Advertisement

তখন কে যে মা, কে মেয়ে আর কে নানিমা বুঝতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে যায়। বাল্য বিবাহের কারণে মুর্শিদাবাদ জেলায় এমন দৃশ্য হামেশাই চোখে পড়ে। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে শনিবার বহরমপুরে আইসিআই স্কুলের সভাকক্ষে ইমান ও কাজিদের নিয়ে একটি আলোচনা সভায় এমনটাই বলছিলেন বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মৌলানা আতিউর রহমান। তিনি বলেন, “এটা অত্যন্ত লজ্জার।”

মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ ও ‘ডিস্ট্রিক্ট আর্লি ম্যারেজ প্রিভেনশন অর্গানাইজেশন’ এবং ‘চাইল্ড ইন নিড ইনস্টিটিউট’-এর মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ওই আলোচনাসভায় মৌলানা আতিউর রহমান বলেন, “কাজি, ইমামরা বিয়ে প্রতি ১০০ টাকা সাম্মানিক পান। দেড়-দু’ হাজার টাকার বিনিময়ে এক শ্রেণির অসৎ কাজি ও ইমাম বেআইনি ভাবে অপ্রাপ্ত বয়সের ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেন।” এমনটা যাতে বন্ধ হয় সে ব্যাপারে তিনি আর্জি জানান।

Advertisement

কেবলমাত্র প্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দেওয়াই নয়, বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের মতামতকেও যথেষ্ট মান্যতা দেওয়ার দাবি তোলেন মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরের কাজি মোস্তাক আহমেদ। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি তাঁর নিজের পরিবারের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। তাঁর ৩ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেজো মেয়ে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন। ছোট মেয়ে এমএ পাশ করে চাকরির চেষ্টা করছেন। কাজি মোস্তাক আহমেদ বলেন, “বাবা হিসাবে দুই অবিবাহিত মেয়ের বিয়ে দেওয়া আমার দায়িত্ব। সে কথা তুলতেই মেজো মেয়ে বলল, ‘পিএইচডি করার পর চাকরি পেলে বিয়ে করব।’ ছোট মেয়েও বলল, ‘চাকরির চেষ্টা করছি। চাকরি পাওয়ার পর বিয়ে করব।’ আমি দুই মেয়ের কথাকেই গুরুত্ব দিয়েছি। মুসলিম ব্যক্তিগত আইন অনুসারে ১৫-১৮ বছর বয়সের মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, ব্যক্তিগত বা শরিয়তি আইনের থেকেও ভারতীয় সংবিধান ও ভারতীয় আইনকেই বেশি মান্যতা দেওয়া প্রয়োজন। তাই ১৮ বছরের কম বয়সের মেয়েদের বিয়ে রুখতে কাজি ও ইমামদের সক্রিয় হতে হবে।”

মুসলিম সম্প্রদায় অধ্যুষিত কাশ্মীরের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের তুলনা করে ‘ডিস্ট্রিক্ট আর্লি ম্যারেজ প্রিভেনশন অর্গানাইজেশন’-এর আহ্বায়ক মাসুদ আলম বলেন, “কাশ্মীরে বাল্য বিবাহের হার ২২ শতাংশ। মুর্শিদাবাদে সেটা শতকরা ৪৮ শতাংশ। এ জেলার পক্ষে এটা লজ্জার। বাল্য বিবাহের ২ বছরের মধ্যে আইনি পথে বিয়ে বাতিলও করা যায়। বাল্য বিবাহ হলে ওই বিয়ের কাজি, পাত্রপাত্রীর অভিভাবক, বিয়েবাড়ির রাঁধুনি, নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাওয়ায় অতিথি-- সবাই আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধী। এ বিষয়ে ইমাম কাজিদের সক্রিয় হতে হবে।” ওই প্রসঙ্গ টেনে কাজি মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘‘এক শ্রেণির কাজি পাত্রপাত্রীর বয়সের ও অভিভাবকত্বের প্রমাণপত্র ছাড়াই বিয়ে দেন। তার ফলেও বাল্য বিবাহ বাড়ছে।”

মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “এ জেলায় মসজিদের সংখ্যা ৫ হাজার। ইমামও আছেন ৫ হাজার। ২০০ জন কাজি আছেন। ইমাম ও কাজিদের মান্য করেন সমাজের মানুষ। ইমাম ও কাজিরা উদ্যোগী হলেই নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা যায়। এ বছরে পুলিশর কাছে জমা পড়া ১৬২১৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫ হাজারেও বেশি বধূ নির্যাতনের ঘটনা। তার মধ্যে ৪২ জন বধূ খুন হয়েছে। ওই সব ঘটনার মূলে রয়েছে নাবালিকা বিয়ে। তার শতকরা ৯৫ ভাগই মুসলিম পারিবারের ঘটনা। তাছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, ১৮ বছরের আগে মা হওয়ার মতো শারীরিক গঠন সম্পূর্ণ হয় না। ফলে শিশু ও মা দু’ জনেই অপুষ্টিতে ভোগেন।” পুলিশ সুপার জানান, জেলায় নথিভূক্ত বধূ নির্যাতনের ঘটনা ৫ হাজার। বাস্তবে সেই সংখ্যাটা আরও বেশি। ইমাম ও কাজিদের নিয়ে এর পর মহকুমা ও ব্লক স্তরে এই রকম আলোচনাসভার আয়োজন করা হবে।

পথ দুর্ঘটনায় মৃত ২

লরির সঙ্গে ধাক্কায় মারা গেলেন মোটরবাইক আরোহী বাবা-ছেলের। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে তারাপুর কেন্দ্রীয় বিড়ি শ্রমিক হাসপাতালের সামনে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। মৃতদের নাম হায়দার আলি (৩০) ও ইনতিয়াজ আলম (৫)। তাঁদের বাড়ি ফরাক্কা থানার আকুঁড়া গ্রামে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন