কান্নায় ভেঙে পড়েছেন খোকনের পরিজনেরা। ছবি : অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
বরযাত্রী বোঝাই গাড়ির সঙ্গে ট্রাক্টরের সংঘর্ষে মৃত্যু হল বরের ঠাকুমা-সহ তিন জনের। আহত আরও ছয়। শনিবার মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের সাহেবনগরের কাছে রঘুনাথগঞ্জ-মুরারই রাজ্য সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মারা যান পাত্রের ঠাকুমা মায়া মণ্ডল (৫২) এবং দুই খুড়তুতো ভাই সুজয় মণ্ডল (১৩) ও খোকন মণ্ডল (১৮)। সকলেই সাগরদিঘির ছামুগ্রামের বাসিন্দা। এ বছরই খোকনের উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল। দুর্ঘটনার জেরে ওই পরিবারে বৌভাতের অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে গিয়েছে। আহতরা বহরমপুর মেডিক্যাল ও জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শুক্রবার সাগরদিঘির ছামুগ্রামের বাসিন্দা শেখর মণ্ডলের সঙ্গে বীরভূমের কনকপুরের বাসিন্দা ঝিলিকের বিয়ে হয়। এ দিন ভোরে পাঁচটি ছোটগাড়িতে চেপে সাগরদিঘিতে ফিরছিলেন বরযাত্রীরা। আগের রাতে ভাল ঘুম না হওয়ায় সকলেই কমবেশি ঘুমোচ্ছিলেন। হঠাৎই একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বালি বোঝাই ট্রাক্টরের পিছনে ধাক্কা মারে। ঘটনায় আহত হন গাড়ির সব যাত্রীই। ঘটনাস্থলেই মারা যান বরের ঠাকুমা মায়াদেবী। জঙ্গিপুর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বরের খুড়তুতো ঠাকুমা বাসু মণ্ডল বলেন, “খুব জোরে গাড়ি চলছিল। আস্তে চালানোর জন্য চালককে বারবার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি কথা শোনেননি।” চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলেও তিনি জানান।
দুর্ঘটনার পরে পিছনের গাড়িগুলি চলে আসে। বাকি বরযাত্রীরা আহতদের উদ্ধার করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চার জনকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় সুজয় ও খোকনের।
এ দিন বিকেলে ছামুগ্রামের মণ্ডল পাড়ায় যেতে শোনা গেল কান্নার রোল। নব দম্পতিকে ঘিরে রেখেছেন প্রতিবেশীরা। বৌভাতের অনুষ্ঠান আর হয়নি। মৃত সুজয়ের বাড়িতে মৃত্যুসংবাদ পৌঁছলেও সেখানে কাঁদার মতো কেউ নেই। দুর্ঘটনায় আহত সুজয়ের বাবা প্রতাপ মণ্ডল বহরমপুর মেডিক্যালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। বাকরুদ্ধ খোকনের পরিজনেরা। খোকনের ভগ্নিপতি সুজিতও হাসপাতালে ভর্তি। নিজের ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী গিয়ে তিন জনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পাত্রের বাবা গোলক মণ্ডল। বুঝতে পারছেন না কাকে, কী ভাবে সান্ত্বনা দেবেন। তাঁর বিলাপ, “কাল কত আনন্দ, হৈ-হুল্লোড় চলছিল। আজ সব শেষ হয়ে গেল।”