মায়ের উপর অত্যাচার, বদলা নিতে খুন বাবাকে

মায়ের উপর অমানুষিক অত্যাচার করতেন বাবা। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে চলে যান মা। এর ক’দিন পরেই দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বঁটি দিয়ে শ্বাসনালি কেটে বাবা সুরেশ সাহাকে (৪৬) খুন করল তাঁর বড় ছেলে। মায়ের উপর অত্যাচারের বদলা নিতেই সে বাবাকে খুন করেছে, মনে করছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪০
Share:

মায়ের উপর অমানুষিক অত্যাচার করতেন বাবা। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে চলে যান মা। এর ক’দিন পরেই দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বঁটি দিয়ে শ্বাসনালি কেটে বাবা সুরেশ সাহাকে (৪৬) খুন করল তাঁর বড় ছেলে। নদিয়ার কৃষ্ণনগর লাগোয়া বৈকুণ্ঠ সড়কের ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলে পলাতক থাকলেও, বৃহস্পতিবার রাতে তার এক বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত পরিতোষ সাহা বৈকুণ্ঠ সড়কের বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, সুরেশবাবুর বড় ছেলে এলাকায় শান্ত ও ভদ্র বলেই পরিচিত। মায়ের উপর অত্যাচারের বদলা নিতেই সে বাবাকে খুন করেছে, মনে করছে পুলিশ।

Advertisement

জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “মায়ের উপরে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিহতের বড় ছেলে তার দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বঁটি দিয়ে শ্বাসনালি কেটে খুন করেছে। নিহতের ছোট ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা বিষয়টি জানতে পারি। জেরায় এই খুনের কথা কবুল করেছে ধৃত পরিতোষও।” শুক্রবার পরিতোষকে কৃষ্ণনগর এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। বড় ছেলের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৪ অগস্ট দুপুরে বাড়ির পাশে একটি বাগানের ভিতর থেকে প্রতিষ্ঠিত বস্ত্র ব্যবসায়ী সুরেশবাবুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনার পরে বাড়িতে কাউকে দেখতে না পেয়ে সন্দেহ হয় পুলিশের। ১৫ অগস্ট নিহতের ছোট ছেলেকে মামার বাড়ি থেকে তুলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জেরায় সপ্তম শ্রেণির ওই পড়ুয়া জানায় যে, তার দাদা বন্ধুদের নিয়ে এসে সুরেশবাবুকে খুন করে। সে নিজে ওই ঘটনা দেখেছে বলে জানায় ওই কিশোর।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, সুরেশবাবু প্রায়ই স্ত্রীর উপর অত্যাচার করতেন। মাস তিনেক আগে সুরেশবাবু স্ত্রীকে এমন মারধর করেন যে তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। প্রতিবেশীরা জানান, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসার পরেও অত্যাচারের মাত্রা কমেনি।

বাধা দিতে গেলে ছেলেদেরও মারধর করতেন ওই ব্যবসায়ী। স্থানীয় দোগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের সোনিয়া দাসের স্বামী দেবাশিস দাস বলেন, “সুরেশকে আমরা সবাই নিষেধ করেছি। কিন্তু ও কারও কথা শুনত না।”

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার কয়েকদিন আগে স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দুই ছেলেকে রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সুরেশবাবুর স্ত্রী। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, এর পরেই মায়ের উপরে অত্যাচারের বদলা নেওয়ার পরিকল্পনা করে ওই ব্যবসায়ীর বড় ছেলে। ১২ অগস্ট রাতে মদ খেয়ে তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে সে তার বাবাকে খুন করে। রাতের অন্ধকারে মৃতদেহটি বাড়ির কাছে বাগানে ফেলে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়।

সুরেশবাবুর বড় ছেলে এলাকায় অত্যন্ত ভাল ছেলে বলেই পরিচিত। খুনের দিন সে প্রথম মদ খেয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের এরকম এক জন ছেলে যে বাবাকে খুন করতে পারে সে কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না এলাকার মানুষ। সুরেশবাবুর স্ত্রী বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গিয়েছিলেন নবদ্বীপে মাসির বাড়ি। শুক্রবার তিনি বৈকুণ্ঠ সড়কে এক ননদের বাড়িতে উঠেছেন। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমার বড় ছেলে কাউকে খুন করতে পারে। তবে সেই ছোটবেলা থেকেই আমার উপরে অত্যচার হতে দেখেছে। তাই হয়ত বিরক্ত হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে,” বলছেন মা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন