জাতীয় সড়ক হলেও রাস্তা সরু। তার উপরেই অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড নাকাশিপাড়ায়। দু’পাশে সার দিয়ে থাকা দোকানপাটের সামনে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকে বহরমপুরগামী বাস। উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকে কৃষ্ণনগরগামী বাস। এরই মধ্যে আছে ছোট গাড়ি, রিকশা, ট্যাক্সি। বড়-বড় লরি দাঁড়িয়েও মাল ওঠা-নামা করে রাস্তার উপরে। ঘিঞ্জি এলাকায় গাড়ির ভিড়ে যানজটে জেরবার সকলে। দীর্ঘ দিন ধরে স্থায়ী বাস টার্মিনাসের দাবি তুলছেন এলাকার লোকজন। কে কার কথা শোনে।
নাকাশিপাড়ার মূল শহরের চর্তুদিকে রয়েছে অন্তত শ’দেড়েক গ্রাম। ওই সমস্ত গ্রামের লোকজনকে জেলা সদর বা বহরমপুর যেতে হলে নাকাশিপাড়া থেকে বাস ধরতে হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি নাকাশিপাড়া বাস স্ট্যান্ডে তাই লোকজনের ভিড় লেগে থাকে। কিন্তু বাস দাঁড়ানোর স্থায়ী জায়গা নেই। অগত্যা এবড়ো-খেবড়ো রাস্তার উপর বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। চারদিক নোংরা। কোথাও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে চায়ের ভাঁড়, কোথাও প্লাস্টিকের চায়ের কাপ। স্ট্যান্ড থেকে মেরেকেটে ফুট তিনেক দূরে রয়েছে স্তুপীকৃত আবর্জনা। স্থানীয় দোকানদার অশোক নাগের ক্ষোভ, ‘‘দোকানের সামনে যেন বাসের ডিপো। লোকজন দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত পান না। বাসযাত্রী ও বাসকর্মীদের ভিড়ে দোকানে ঢুকতে না পেরে প্রায়ই লোকজনকে চলে যেতে দেখি। ক্ষতি হয় আমাদেরই।’’
কৃষ্ণনগর-বীরপুর রুটে বাস চলে ১৫টা। শিবপুরগামী বাসের সংখ্যা গোটা সাত। মাটিয়ারি ও কাটোয়া ঘাট বাসের সংখ্যা ১৭। কৃষ্ণনগর-কালীগঞ্জ রুটে বাসের সংখ্যা ৭। বহরমপুরগামী বাসও রয়েছে গোটা সাতেক। তেহট্ট ও চাঁদেরঘাটের বাসের সংখ্যা ১৪। ন’টি বাস যায় পলাশীর রামনগর ঘাটে। সব মিলিয়ে প্রায় ৯০টি বাস দাঁড়ায় এই অস্থায়ী বাস স্ট্যান্ডে। একই ভাবে উল্টো দিকে কৃষ্ণনগরগামী বাসগুলি দাঁড়িয়ে থাকে। এছাড়াও রয়েছে কলকাতা-শিলিগুড়ি সরকারি-বেসরকারি এক্সপ্রেস বাস।
এই অপ্রশস্ত রাস্তার বাস স্ট্যান্ডের পাশেই রয়েছে রিকশা ও ভ্যানের স্ট্যান্ড। রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে ছোট গাড়িগুলি সারাক্ষণ যাত্রী তুলছে। এর উপর রয়েছে টোটো গাড়ির উত্পাত। রুটবিহীন এই গাড়িগুলিও যখন-তখন অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো করছে। বলাবাহুল্য ট্যাক্সি স্ট্যান্ডও নেই। এক ট্যাক্সি মালিকের ক্ষোভ, ‘‘এমনিতেই শহরে বাস স্ট্যান্ড বলে কোনও বস্তু নেই। তার উপর আমাদেরও গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে অস্থায়ী বাস স্ট্যান্ডে মাঝেমধ্যে দাঁড়াতে হয়। ফলে যানজট চরম আকার নেয়।’’
শহরের অন্যতম ব্যস্ত পাটুলি-ঘাট রাস্তাতেও গজিয়ে উঠিয়ে নাম-কা-ওয়াস্তে বাস স্ট্যান্ড। রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে অগ্রদ্বীপ-পাটুলি ঘাট ও ধর্মদাগামী বাসগুলি যাত্রী ওঠানো-নামানো করে। ফুট পনেরো চওড়া এই রাস্তাতেই বাস ছাড়াও ভ্যানো-টোটো গাড়ি ও যাত্রীবাহী ছোট গাড়ির দেখা মেলে। রাস্তার দু’ধারে রয়েছে বেশ কিছু বড়-বড় কাপড় ও মুদিখানার দোকান। সেই দোকানের মাল আসে পেল্লাই লরিতে করে। এমনিতে বাস-সহ নানা যানবাহনে রাস্তা দখল হয়ে থাকে। তার উপর এই মালবাহী লরির অত্যাচার। স্ট্যাচু মোড় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রাস্তার দু’পাশে অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ডেও যখন-তখন দাঁড়িয়ে থাকে মালভর্তি লরি। নজরদারি চালানোর কেউ নেই, ইচ্ছাও নেই।
স্থায়ী বাস স্ট্যান্ড না থাকার জন্য নেই ভদ্রস্থ শৌচাগারও। রাস্তার পাশের ভাঙাচোরা-অসম্পূর্ণ শৌচাগারে যাওয়া যায় না। ছাউনি না থাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় রোদ-ঝড়-জলে। এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনের কাছে স্থায়ী বাসস্ট্যান্ডের আর্জি জানিয়ে আসছেন। বছর দু’য়েক আগে বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যের পাশে কলকাতা-শিলিগুড়িগামী সরকারি বাসের স্ট্যান্ড তৈরি করার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে আর শেষমেশ তৈরি হয়নি স্ট্যান্ড। স্থানীয় বিধায়ক কল্লোল খান বলেন, ‘‘নাকাশিপাড়ার প্রাণকেন্দ্র বেথুয়াডহরিতে বাস স্ট্যান্ড তৈরির মতো কোনও জায়গা নেই। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণের কাজ শেষ হলে একটু দূরে ইক্ষু গবেষণাগারের কাছে সরকারি জায়গায় বাস স্ট্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।”
কিন্তু কবে?
নাকাশিপাড়া এলাকায় জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য এখনও জমি অধিগ্রহণ করাই সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় স্থায়ী বাস স্ট্যান্ডের আশা করাটা দুরাশা বলেই মনে করছেন এলাকাবাসী।