সবটাই মিথ্যে, বানানো গল্পসজল ঘোষ হত্যা মামলার মূল অভিযুক্ত প্রদীপ সাহা জোর গলায় এমনটাই দাবি করলেন আদালতে।
বুধবার জেরার শেষ পর্বে কাঠগড়ায় তোলা হয় প্রদীপ সাহাকে। কালো ফুলপ্যান্ট, সাদা হাফ শার্টে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে প্রদীপবাবু বিচারকের বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তরেই বলেন, সবই মিথ্যা অভিযোগ। তিনি নির্দোষ।
নবদ্বীপের অতিরিক্ত ও সেশন জজ সুধীর কুমার প্রথমেই জানতে চান, মামলার এক নম্বর সাক্ষী পঙ্কজ গাঙ্গুলি সাক্ষ্যে বলেছেন ০৯-০১-১২ তারিখে পূর্বস্থলী কলেজে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার দিন ছিল। আপনার নেতৃত্রে এসএফআই সমর্থকেরা টিএমসিপির সঙ্গে গোলমালে জড়িয়ে পড়ে ওই দিন। প্রদীপবাবু বলেন, আমি একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ওইদিন স্কুলেই ছিলাম। এরপর বিভিন্ন সাক্ষীর বয়ান অনুযায়ী ঘটনার রাতে প্রদীপ সাহার মোটরবাইকে লোকনাথ দেবনাথ এবং লাল হেলমেট মাথায় এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির নবদ্বীপ হাসপাতালে আসা, সজল ঘোষকে দেখে বলে ওঠা,‘একে না সরাতে পারলে পূর্বস্থলী কলেজে ভোট করা যাবে না’ বা সজল ঘোষকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরার প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। প্রদীপবাবুর জবাব, আমি শিক্ষক। আমার মুখ দিয়ে এ ধরনের কথা আগেও বের হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। বিচারক এরপর জানতে চান যে সাক্ষীরা বলেছেন, লোকনাথ দেবনাথ তার চাদরের ভিতর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে সজল ঘোষকে গুলি করেন এবং তিনি বলেন যে কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রদীপবাবুর দাবি, সব মিথ্যে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এ সব বলা হয়েছে।
আগের দিন শুনানির পরে আদালতের বাইরে গোলমাল হওয়ায় এ দিন পুরো চত্বরেই কড়া পাহারার ব্যবস্থা ছিল। দুপুর ২টো থেকে পরপর পাঁচ অভিযুক্তকে জেরা করেন বিচারক।
শুনানি শুরু হয় অভিযুক্ত সোরাবুদ্দিন মণ্ডল, সইফুদ্দিন মণ্ডল, হানিফ মণ্ডল, সন্তু ভৌমিককে দিয়ে। শেষে জেরা করা হয় প্রদীপ সাহাকে। সকলেরই দাবি, তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যে। সন্তু ভৌমিককে প্রশ্ন করা হয়, ঘটনার দিন আহত হয়ে নবদ্বীপ হাসপাতালে তার সঙ্গে সৌভিক আইচ ও হালিম শেখও ভর্তি হয়েছিলেন কি না। সন্তু ভৌমিক বলেন, তিনি শুধু হালিম শেখকেই দেখেছিলেন। বিচারক জানতে চান, সাক্ষী সৌভিক আইচ এবং হালিম শেখ বলেছেন, তারা রাতে হাসপাতালে একজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আপনার সঙ্গে কথা বলে চলে যেতে দেখেন এবং আপনি সৌভিককে বলেছিলেন লোকনাথ দেবনাথ তাঁকে নীচে ডাকছে। সন্তুর দাবি, সবই মিথ্যে। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। শুনানির শেষে অভিযুক্তদের আইনজীবী প্রতীম সিংহ রায় ভারতীয় ফৌজদারি কার্যবিধির ৯১ ধারা অনুযায়ী আদালতে ঘটনার রাতে ধুবুলিয়া থানার দুটি এবং নবদ্বীপ থানার দুটি জিডি আদালতে হাজির করানোর আবেদনও জানান। ফের শুনানি হবে ১৫ জুলাই, মঙ্গলবার।