সুতিতে খাদান ভাঙল প্রশাসন

সুতি থানায় পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করার পরে কেটে গিয়েছে এক মাস। অভিযুক্ত ১২ জন খাদান মালিকের একজনকেও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। বন্ধ হয়নি ২৫টি পাথর খাদানের একটিও। শেষ পর্যন্ত কড়া মনোভাব নিয়ে নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। সোমবার দুপুরে বেআইনি ভাবে চলা সুতি এলাকার ২৫টি পাথর খাদান ভেঙে দিলেন প্রশাসনের কর্তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সুতি শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৫ ০১:১৯
Share:

সুতিতে অবৈধ খাদান ভাঙার কাজ চলছে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

সুতি থানায় পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করার পরে কেটে গিয়েছে এক মাস। অভিযুক্ত ১২ জন খাদান মালিকের একজনকেও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। বন্ধ হয়নি ২৫টি পাথর খাদানের একটিও। শেষ পর্যন্ত কড়া মনোভাব নিয়ে নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। সোমবার দুপুরে বেআইনি ভাবে চলা সুতি এলাকার ২৫টি পাথর খাদান ভেঙে দিলেন প্রশাসনের কর্তারা। পাশাপাশি, অভিযুক্ত খাদান মালিকদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সুতি থানার পুলিশকে।

Advertisement

এ দিন প্রশাসনের তত্‌পরতায় খুশি সুতির মানুষ। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) অরবিন্দকুমার মিনা ও জঙ্গিপুরের মহকুমা শাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলার নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী সুতির সাজুর মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া ওই খাদানগুলি ভেঙে দেয়। এই অভিযানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি কেউই। খাদানের পাশেই একটি বেআইনি ইটভাটাতেও হানা দেয় পুলিশ। তবে এ দিন ইটভাটা ও খাদানের মালিকদের কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি। অতিরিক্ত জেলা শাসক অরবিন্দকুমার মিনা জানান, ওই পাথর খাদানগুলি সম্পূর্ণ বেআইনি। তাদের না আছে সরকারি অনুমতি, না আছে পরিবেশ দূষণ পর্ষদের ছাড়পত্র। এই এলাকার পরিবেশ ভয়ঙ্কর ভাবে দূষিত হয়ে উঠছিল। বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়ার পরে খাদান মালিকদের প্রথমে শোকজ করা হয়েছিল। তার কোনও সদুত্তর ওই মালিকরা দিতে পারেননি, দেখাতে পারেননি কোনও সরকারি অনুমতির কাগজপত্রও। এরপরেই সেগুলি বন্ধ করতে বলা হয়। কিন্তু সেই নির্দেশ কেউ শোনেননি। এরপর খাদান মালিকের বিরুদ্ধে সুতি থানার পুলিশের কাছে এফআই আর রুজু করা হয় গত ৫ ফেব্রুয়ারি। পুলিশকে বলা হয়েছে দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে।

জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, “একাধিক বার খাদান মালিকদের নোটিস পাঠিয়ে বৈধ সরকারি অনুমতিপত্র দেখাতে বলা সত্ত্বেও তাঁরা তা দেখাতে পারেননি। পরে তাঁদের লিখিত ভাবে জানানো হয় খাদান বন্ধ করে দিতে। সেটাও তাঁরা করেননি। ফলে এলাকার মানুষ পরিবেশ দূষণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। এই ধরনের খাদান যাতে আর না চালু হতে পারে তার জন্য প্রশাসন সবরকম ব্যবস্থা নেবে।” দীর্ঘদিন পরে হলেও প্রশাসন খাদান বন্ধ করায় তত্‌পর হওয়ায় সুতি এলাকার মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। সুতি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সিপিএমের ওজাম্মেল সরকারের কথায়, ‘‘ওই পাথর খাদান নিয়ে বহু বার অভিযোগ হয়েছে প্রশাসনের কাছে। কোনও ফল হয়নি। এতদিনে প্রশাসন তত্‌পর হওয়ায় এলাকার পরিবেশে সুস্থতা ফিরে আসবে।” অরঙ্গাবাদ ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সফিকুল আলম বলেন, “ওই সব খাদান চলার ফলে প্রতিটি খাদানের আশপাশের জমিতে কোনও ফসল হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। জলের দামে সে জমি কিনে নিচ্ছেন খাদান মালিকেরা।” সুতি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি কংগ্রেসের কাওসার আলি বলেন, “পাথরের গুঁড়োর দূষণ কী ভয়ঙ্কর মাত্রা নিয়েছে তা বলার নয়। ওই সব খাদানে কাজ করছে শিশুরাও। শব্দ দৃষণ থেকে পরিবেশ দূষণ সব কিছুর শিকার হচ্ছে মানুষ। এটা সম্পূর্ণ অমানবিক। অবশেষে এই খাদানের বিষয়ে প্রশাসনের টনক নড়ায় এলাকার মানুষ অন্তত হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন।”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন