সেতু নেই, চূর্নি পারাপারে খেয়াই ভরসা মাজদিয়ায়

কংক্রিটের সেতু নেই। ফলে চূর্নি পেরোতে রানাঘাটের মাজদিয়ার লোকজনের ভরসা খেয়া। সন্ধ্যা একটু গড়ালেই নৌকা মেলে না আর। তখন রানাঘাট শহরে যেতে মাজদিয়াবাসীকে অতিরিক্ত প্রায় নয় কিলোমিটার পথ উজিয়ে হবিবপুর ঘুরতে হয়।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০০:৩০
Share:

রোজ এ ভাবেই চলে পারাপার।—নিজস্ব চিত্র।

কংক্রিটের সেতু নেই। ফলে চূর্নি পেরোতে রানাঘাটের মাজদিয়ার লোকজনের ভরসা খেয়া। সন্ধ্যা একটু গড়ালেই নৌকা মেলে না আর। তখন রানাঘাট শহরে যেতে মাজদিয়াবাসীকে অতিরিক্ত প্রায় নয় কিলোমিটার পথ উজিয়ে হবিবপুর ঘুরতে হয়। বর্ষায় জলকাদায় মাখামাখি খেয়াঘাটে যাতায়াত করাও বিরাট সমস্যা। রানাঘাট শহরের সঙ্গে যোগাযোগের এ হেন সমস্যার জন্য অনেকেই মাজদিয়া ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভোটের মুখে সব দলের নেতারাই সেতু তৈরির গালভরা প্রতিশ্রুতি দেন। ভোট শেষে ফিরে আসে সেই পুরনো ছবিই।

Advertisement

মাজদিয়ার মানুষকে স্কুল-কলেজ-হাসপাতালে আসার জন্য চূর্নি পেরিয়ে আনুলিয়া হয়ে রানাঘাট শহরে আসতে হয়। সকাল-বিকেল প্রবল ভিড় ঠেলেই পড়ুয়ারা স্কুল-কলেজে যায়। নৌকায় মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের জন্য দুর্ঘটনাও ঘটে মাঝেমধ্যেই। আনুলিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজীব নিয়োগী বলেন, “আমাদের স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১৭০০। এর মধ্যে কমপক্ষে পাঁচশো জন আসে নদীর ওপার থেকে। স্কুল থেকে ফেরার পথে নৌকোয় ভিড় এড়াতে অনেক সময়ই আমরা ক্লাসগুলোকে আগে-পিছু করে ছুটি দিই। অবশ্য সব সময় এটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেতুটা হলে সব সমস্যার সমাধান হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা সাবদার দফাদারের ক্ষোভ, “রাতবিরেতে কোনও রোগীকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে সমস্যার অন্ত থাকে না। তখন খেয়া চলে না। ঘুরপথে নিয়ে যেতে হয়।”

তপনকুমার রায় এক সময় থাকতেন মাজদিয়ায়। বললেন, “যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। রাতবিরেতে হাজার প্রয়োজনেও শহরে আসা যায় না। তাই এখন আনুলিয়ায় চলে এসেছি। অভিজ্ঞতায় জানি ওপারের লোকজনের কষ্ট কতটা। চূর্নির উপর সেতু হলে এলাকার মানুষগুলো একটু নিশ্চিন্তে দিন কাটাতে পারতেন।”

Advertisement

কেন হচ্ছে না সেতু?

রানাঘাটের মহকুমাশাসক সুপর্ণকুমার রায়চৌধুরী বলেন, “ওই সেতু তৈরির কথা ছিল হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনারের। যতদূর জানি খানিকটা কাজও এগিয়েছিল। তারপর আচমকা থেমে যায়। এখন কী অবস্থায় রয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখব।”

বাম আমলে ওই সেতুর শিলান্যাস করেছিলেন প্রয়াত পরিবহণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্র্তী। কিন্তু তারপর কোদালের একটা কোপও পড়েনি। প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক অলোককুমার দাস বলেন, “আমরা প্রাথমিক পর্যায়ের বেশ খানিকটা কাজ করেছিলাম। কিন্তু, সরকার বদলের পর আর এগোয়নি কাজ।” সিপিএমের হবিবপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক অসিত প্রামাণিকের দাবি, “ব্রিজ তৈরির জন্য মাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল। টেন্ডারও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু, তারপর আর কাজ হয়নি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ব্রিজ তৈরির ব্যাপারটা ধামাচাপা পড়ে যায়।”

এলাকার বর্তমান বিধায়ক তৃণমূলের আবীররঞ্জন বিশ্বাসের সাবধানি উত্তর, “সেতু নিয়ে আমরা ভাবনা চিন্তা করব।”

ভাবনা বাস্তবায়িত হওয়ার অপেক্ষায় এখন মাজদিয়াবাসীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন