বিভাস অধিকারী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
নয়ডায় ভুয়ো থানা খুলে গ্রেফতার হয়েছেন বিভাস অধিকারী। সেই থানার পোশাকি নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন’! সে রকম থানা কি কলকাতাতেও খোলার চেষ্টা করছিলেন ধৃত বিভাস অধিকারী? বেলেঘাটায় একটি বিল্ডিংয়ের বাইরে সাইনবোর্ড চোখে পড়েছিল স্থানীয়দের, যেখানে বিভাসকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের সদস্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সংগঠনের একটি ওয়েবসাইটেরও হদিস মিলেছে। তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম। সেই ওয়েবসাইটে প্রাক্তন ফুটবলার রোনাল্ডিনহোর সঙ্গেই ‘পিস অ্যাম্বাসাডর’ হিসেবে ছবি রয়েছে বিভাসের।
নয়ডায় ভুয়ো থানা খুলে প্রতারণার অভিযোগ বিভাসের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে তাঁর পুত্র অর্ঘ্য অধিকারীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতেরা দাবি করতেন, তাঁদের ব্রিটেনেও অফিস রয়েছে। ইন্টারপোল এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে তাঁদের। পুলিশের দাবি, এই নথি দেখিয়েই অভিযুক্তেরা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। এ বার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের একটি ওয়েবসাইটে সদস্যদের তালিকায় দেখা গেল বিভাসকে। তাঁর পরিচয় হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘পিস অ্যাম্বাসাডর ইন রিপাবলিক অফ ইন্ডিয়া’। বিভাসের ছবিও রয়েছে। সদস্যদের তালিকায় বিভাসের পাশেই রয়েছে ব্রাজ়িলের প্রাক্তন ফুটবলার রোনাল্ডিনহোর ছবি। ছবির নীচে তাঁর পরিচয় হিসেবে লেখা রয়েছে— ‘পিস অ্যাম্বাসাডর’। জার্মানি, জর্জিয়া, পোল্যান্ড, সুইৎজ়ারল্যান্ডের ‘পিস অ্যাম্বাসাডর’ও রয়েছেন তালিকায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, জুলাই মাসের শেষে বেলেঘাটায় একটি ফ্ল্যাটের বাইরে সাইনবোর্ড চোখে পড়েছিল স্থানীয়দের, যেখানে বিভাসকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বলে দাবি করা হয়। বিষয়টি নজরে আসার পরে থানায় গিয়ে জানান স্থানীয় এক জন। সে সময় পুলিশ গিয়ে সেই সাইনবোর্ড খুলে দেয়। বিভাসের লোকজন জানিয়েছিলেন, ওই ফ্ল্যাটে এনজিও (অসরকারি সংগঠন) চালানো হয়। কিন্তু এনজিওর কোনও নথি তাঁরা দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ। পরে তাঁর আইনজীবী থানায় যান। তবে ওই সাইনবোর্ড কিসের ভিত্তিতে টাঙানো হচ্ছিল, তার প্রমান দিতে পারেননি আইনজীবী। সেজন্য থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তদন্তকারীদের একটি সূত্র মনে করছে, ওই সাইনবোর্ড লাগিয়ে কলকাতাতেও ভুয়ো থানা খোলার চেষ্টা করছিলেন বিভাস।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শনিবার রাতে নয়ডার সেক্টর ৭০-এ বিএস-১৩৬ নম্বর বাড়িতে হানা দিয়েছিল পুলিশ। সেখান থেকেই গ্রেফতার হন বিভাস, তাঁর পুত্র এবং আরও চার জন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়িতেই ভুয়ো থানা তৈরি করে প্রতারণাচক্র চালাতেন ধৃতেরা। নিজেদের সরকারি আধিকারিক বলে পরিচয় দিতেন। সেই সঙ্গে ভুয়ো পরিচয়পত্র এবং নথি দেখিয়ে তোলাবাজির কারবার চালাতেন তাঁরা। কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকের সঙ্গে সম্পর্কিত জাল নথিও মিলেছে তাঁদের কাছ থেকে। নয়ডার ডিসিপি সেন্ট্রাল শক্তিমোহন অবস্তি বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগেই ওই ভুয়ো অফিস খুলেছিলেন অভিযুক্তেরা। দিন দশেক আগেই অফিসের বাইরে থানার মতো বোর্ড লাগানো হয়েছিল।’’
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যুব তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা কুন্তল ঘোষ (বর্তমানে জামিনে মুক্ত) গ্রেফতার হওয়ার পর বিভাসের নাম উঠে এসেছিল। বস্তুত, রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতারির পর থেকে বিভাসের নাম পেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। এক সময় বেসরকারি বিএড এবং ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি ছিলেন নলহাটির ওই বাসিন্দা। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেও পরিচিত ছিলেন তিনি।
মানিকের গ্রেফতারির পর পরেই ইডি আধিকারিকেরা উত্তর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটে একটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিলেন। সেই ফ্ল্যাটের সঙ্গে বিভাসের যোগ রয়েছে বলে দাবি করেছিল ইডি। তল্লাশি অভিযানের পর সেই ফ্ল্যাট সিলও করে দেওয়া হয়। তার আগে বীরভূমে বিভাসের বাড়ি এবং আশ্রমে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল সিবিআই। এক সময় নলহাটি-২ ব্লকে তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন এককালে অনুব্রত মণ্ডলের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত বিভাস। গরু পাচার মামলায় অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরেই তৃণমূল ছেড়ে দেন তিনি। তার পর ‘অল ইন্ডিয়া আর্য মহাসভা’ নামে একটি নতুন দলও তৈরি করেছিলেন।