SSC Teachers Recruitment Scam

অযোগ্য শিক্ষকের তালিকায় পুত্রবধূ, কন্যার নাম! অস্বস্তি কাটাতে গা বাঁচিয়ে জবাব তৃণমূল বিধায়ক নির্মল-হামিদুরের

সম্প্রতি স্কুল সার্ভিস কমিশন ২০১৬ সালের বাতিল হওয়া প্যানেল থেকে ১৮০৬ জন অযোগ্য প্রার্থীর নাম প্রকাশ করে। এই তালিকাতেই উঠে এসেছে নির্মল ঘোষের পুত্রবধূ শম্পা সরকারের নাম। শম্পা নৈহাটির মহেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি, চোপড়ার বিধায়ক হামিদুর রহমানের কন্যা রোশনারা বেগমের নামও রয়েছে। রোশনারা পড়াতেন কালীগঞ্জ হাইস্কুলে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:২২
Share:

(বাঁ দিকে) পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ, চোপড়ার বিধায়ক হামিদুর রহমান (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে যোগ দিতে এসেও বিতর্কের কেন্দ্রে শাসকদলের দুই বিধায়ক। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) প্রকাশিত অযোগ্য শিক্ষকদের তালিকায় তাঁদের পরিবার-পরিজনের নাম উঠে আসায় সোমবার কার্যত অস্বস্তিতে পড়লেন পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষ এবং উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার বিধায়ক হামিদুর রহমান। অধিবেশনের ফাঁকেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়ে দুই বিধায়কই গা বাঁচানোর ঢংয়ে জবাব দেন।

Advertisement

আদালতের নির্দেশ মেনে এসএসসি সম্প্রতি ২০১৬ সালের বাতিল হওয়া প্যানেল থেকে ১৮০৬ জন অযোগ্য প্রার্থীর নাম প্রকাশ করে। এই তালিকাতেই উঠে এসেছে নির্মল ঘোষের পুত্রবধূ শম্পা সরকারের নাম। শম্পা নৈহাটির মহেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি, চোপড়ার বিধায়ক হামিদুর রহমানের কন্যা রোশনারা বেগমের নামও রয়েছে। রোশনারা পড়াতেন কালীগঞ্জ হাইস্কুলে।

তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিরোধীরা তৃণমূল বিধায়কদের পরিবারের এই সংযোগকে হাতিয়ার করে শাসকদলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে। তাদের অভিযোগ, শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে গ্রামীণ স্তর পর্যন্ত তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী, বিধায়কের আত্মীয়স্বজন বেআইনি ভাবে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ পেয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশে প্রকাশিত এই তালিকা সেই অভিযোগকেই আরও স্পষ্ট করেছে। শনিবার সন্ধ্যার পর প্রথম দফায় ১৮০৪ জন অযোগ্য শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করে এসএসসি। তবে তালিকা প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাতে নতুন নাম যুক্ত হওয়ায় বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়েছে। সেই বর্ধিত তালিকাতেই পুনরায় উঠে এসেছে রোশনারা বেগমের নাম। তালিকায় অযোগ্যদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮০৬ জন।

Advertisement

অস্বস্তির মুখে নির্মল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “এ নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। সবটাই আদালতের নির্দেশে হয়েছে। আদালতই ঠিক করবে সত্য-মিথ্যা কী। আইন আইনের পথে চলবে।” বিধায়ক হামিদুর আবার দায় এড়িয়ে বলেন, “এ বিষয়ে যা বলার মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোক বলবেন। যা করার করবেন জামাই ও তাঁর পিতা।”

এই মন্তব্যে স্পষ্ট, দুই বিধায়কই সরাসরি জবাব না দিয়ে উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, পরিবারের সদস্যদের নাম তালিকায় উঠে আসায় তাঁদের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছর ধরে মামলা চলছে কলকাতা হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে। আদালত জানিয়ে দিয়েছে, বেআইনি ভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের চাকরি বাতিল করতে হবে। সেই রায় অনুসারেই এসএসসি শনিবার তালিকা প্রকাশ করে। তালিকায় শাসকদলের দুই বিধায়কের আত্মীয়দের নাম প্রকাশ পাওয়ার পর বিরোধীরা নতুন করে তৃণমূলের উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে। বিজেপি শিবিরের অভিযোগ, “এই ঘটনা প্রমাণ করছে যে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ছিল শাসকদলের ছত্রছায়াতেই।”

অন্য দিকে, তৃণমূলের অন্দরেও এই ঘটনায় অস্বস্তি তৈরি হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত। কারণ, আদালতের নির্দেশ মেনে এসএসসি যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে কারও প্রভাব খাটানোর সুযোগ নেই। কিন্তু তালিকায় দুই বিধায়ক-সহ নেতাদের পরিবারের সদস্যদের নাম উঠে আসার ঘটনা শাসকদলের ভাবমূর্তিতে ধাক্কা দিচ্ছে। আদালতের পরবর্তী শুনানিই এখন নির্ধারণ করবে শম্পা ও রোশনারার চাকরির ভবিষ্যৎ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement