বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাকের সঙ্গে যোগসাজশ রেখে কাজ করার অভিযোগ তুললেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের হরিপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রামের এক বিজেপি নেতা তৃণমূলে যোগ দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁর পুত্রকে ভিলেজ পুলিশের কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে শুভেন্দুর দাবি। নন্দীগ্রাম থেকে ন’জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে শুধু ‘হিন্দু হওয়ার কারণে’ অন্যান্য থানায় বদলি করে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।
বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়কের দাবি, গত কয়েক মাস ধরে তাঁর নির্বাচনী এলাকার একাধিক বিজেপি নেতাকে দলবদল করানোর চেষ্টা হয়েছে। আইপ্যাকের লোকজন গোপনে বিভিন্ন স্তরের বিজেপি নেতাদের কাছে গিয়ে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছেন বলে শুভেন্দু দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘কারও কাছে আইপ্যাক গেলেই আমরা খবর পেয়ে যাচ্ছি।’’ তাঁর দাবি, আমদাবাদ-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিজেপি আহ্বায়ক দিলীপ পালের কাছে কয়েক মাস আগে আইপ্যাকের প্রস্তাব পৌঁছোয়। তৃণমূলে যোগদান করে কী কী দিলীপ পেতে পারেন, সে সবও বলা হয়। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘দিলীপবাবু আগে বামপন্থী দল করতেন। ২০১৮-১৯ সাল থেকে ওই এলাকায় বিজেপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি আদর্শবান মানুষ। চাওয়া-পাওয়া নিয়ে রাজনীতি কখনও করেননি। তাই আইপ্যাকের প্রস্তাবে তিনি সাড়া দেননি। দলকেও সে বিষয়ে কিছু বলেননি।’’
দিলীপের পুত্র দীপাঞ্জন পাল নন্দীগ্রাম থানার রেয়াপাড়া ফাঁড়ির অধীনে ভিলেজ পুলিশ পদে কর্মরত ছিলেন বলে শুভেন্দু জানান। তাঁর কথায়, ‘‘দিলীপবাবু দল পরিবর্তন না-করায় পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্যকে বলে আইপ্যাক দিলীপবাবুর ছেলেকে কাজ থেকে বসিয়ে দিয়েছে।’’ রেয়াপাড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ সম্প্রতি একটি হোয়াট্সঅ্যাপ বার্তা পাঠিয়ে দীপাঞ্জনকে কর্মচ্যুত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে শুভেন্দু জানান। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ছেড়ে দেব না। ইতিমধ্যেই দীপাঞ্জন কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালত মামলা গ্রহণ করেছে। আশা রাখি আগামী সপ্তাহে মামলাটি উঠবে।’’ এই মামলার মাধ্যমে আইনি পথে মুখ্যমন্ত্রীকে এবং পুলিশ সুপারকে নন্দীগ্রাম শিক্ষা দেবে বলে শুভেন্দু মন্তব্য করেছেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার এই অভিযোগের বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তবে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, ‘‘অনাবশ্যক বিভিন্ন অভিযোগ শুভেন্দু অধিকারী প্রতি দিনই করে থাকেন। সে সব অভিযোগের বাস্তবতা নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ভিলেজ পুলিশ পদ থেকে কাউকে সরানোর সঙ্গে তিনি রাজনীতির যোগ খুঁজে বার করছেন। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, একটি পরামর্শদাতা সংস্থার নামও টেনে আনছেন। তা হলে বুঝতে হবে, বিজেপি এতটাই ভঙ্গুর যে, সব সময় ভয়ে কাঁপছে।’’ জয়প্রকাশের কটাক্ষ, ‘‘এ সব অবাস্তব অভিযোগ না তুলে শুভেন্দুবাবুর উচিত নিজেদের দলের রাজ্য কমিটি ঠিকঠাক গঠন করা এবং সংগঠনে মন দেওয়া। তাতে ওঁদের ভাল হতে পারে বলে মনে হয়।’’