West Bengal News

বীণাপানির পা ছুঁয়ে ঠাকুরনগরের মঞ্চে উঠবেন মোদী, দেখাই করবেন না বড়মা, চ্যালেঞ্জ জ্যোতিপ্রিয়র

শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন, বড়মাকে প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে হাজির করার কোনও পরিকল্পনা তাঁদের নেই। বরং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে বড়মাকে প্রণাম করবেন।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ২১:১২
Share:

ঠাকুরনগরে জনসভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেখা করবেন বড়মার সঙ্গেও। —ফাইল চিত্র

মতুয়া মহাসঙ্ঘের ডাকে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে জনসভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু শুধু জনসভাতেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না প্রধানমন্ত্রী। মতুয়া সম্প্রদায়ের ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে সে দিন তিনি বড়মাকে প্রণামও করবেন। এমনটাই জানিয়েছেন মতুয়া সমাজের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপানি দেবী (বড়মা)-র নাতি শান্তনু ঠাকুর। কিন্তু, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চ্যালেঞ্জ, বড়মা দেখাই করবেন না নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর ‘মাথা খারাপ’ হয়ে গিয়েছে বলেও বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয় মন্তব্য করেছেন।

Advertisement

যদিও রাজ্য বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, ঠাকুরনগরে দলীয় কোনও কর্মসূচি নেই। সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘই সেখানে নরেন্দ্র মোদীর সভার আয়োজন করেছে। শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন, বড়মাকে প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে হাজির করার কোনও পরিকল্পনা তাঁদের নেই। বরং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে বড়মাকে প্রণাম করবেন। রাজ্য বিজেপি যদিও সে রকম কোনও পরিকল্পনার বিষয়ে নিশ্চিত নয়। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু এ দিন বলেন, ‘‘শান্তনু ঠাকুর ওই সভার আয়োজক। অতএব তাঁর তরফে এ রকম প্রস্তাব থাকতেই পারে, বড়মাকে প্রণাম করতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রধানমন্ত্রীকে নির্দিষ্ট কিছু প্রোটোকল মেনে চলতে হয়। তাই তিনি কোথায় কোথায় যাবেন, সেটা আমরা বা শান্তনুরা ঠিক করতে পারব না। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর।’’

রাজনীতির কারণেই বেশ কয়েক বছর ধরে ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ি আড়াআড়ি দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের টিকিটে বনগাঁ লোকসভা আসন থেকে জেতা সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর দাবি করেন তিনিই সঙ্ঘাধিপতি। অন্য দিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার প্রাক্তন সদস্য মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর, যাঁর সঙ্গে এই মুহূর্তে তৃণমূলের দূরত্ব বিস্তর, তাঁর ছেলে শান্তনু ঠাকুরও দাবি করেন, তিনিই সঙ্ঘাধিপতি। মমতাবালার দাবি খণ্ডন করতে তাঁর যুক্তি, ‘‘মহিলারা সঙ্ঘাধিপতি হতে পারেন না। যে কারণে বড়মাও সঙ্ঘাধিপতি হননি। সঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবেই থেকেছেন।’’

Advertisement

আরও পডু়ন: অফিস থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতাকে গ্রেফতার করল সিবিআই

এই বিভাজন যে একেবারে নতুন, তেমনটা নয়। তবে ইদানীং সেই বিভাজন আরও বাড়ছে। আগে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট বামেদের দিকেই ছিল। পরে তৃণমূলের দিকেই ঝুঁকে গিয়েছে মতুয়াদের বেশির ভাগ অংশ। এখনও পর্যন্ত মতুয়া সমাজের অধিকাংশকেই তৃণমূল নিজেদের দিকে রাখতে পেরেছে। তবে, শান্তনু ঠাকুরকে ব্যবহার করে সেই ভোট ব্যাঙ্কে ভাগ বসানোর চেষ্টা শুরু করেছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর ঠাকুরনগর সফরও যে সেই লক্ষ্যেই, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের কোনও সংশয় নেই।

তৃণমূল কিন্তু সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচির দিকে। এ দিন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আসছেন, আসুন। তবে, বড়মা তাঁর প্রণাম নেবেন কি না সেটা জেনে আসা উচিত ছিল।’’ একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘বড়মা প্রণাম গ্রহণ তো দূরের কথা, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখাই করবেন না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বড়মা যদি দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন, যদি বলেন নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করব না, তা হলে উনি কি জোর করে ঢুকবেন? মিলিটারি দিয়ে দরজা ভাঙবেন?’’

আরও পড়ুন: ঘেরাও উঠল প্রেসিডেন্সিতে, তুলে নেওয়া হল ৩ ছাত্রের সাসপেনশন

জ্যোতিপ্রিয়র পাল্টায় সায়ন্তন বসুকেও হুঁশিয়ারি দিতে শোনা গেল। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন, তিনি বড়মাকে প্রণাম করবেন, তা হলে দরজা ভাঙার প্রয়োজন পড়বে না। যাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে আটকানোর চেষ্টা করবেন, তাঁদেরকে শ্রীকান্ত মোহতার অবস্থার কথা মনে করিয়ে দিতে চাই।’’

এ দিন মোদীর ঠাকুরনগর সফর নিয়েও তাঁকে কটাক্ষ করেছেন জ্যোতিপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ভোটের জন্য ঠাকুরনগরে আসছেন। কিন্তু, বিজেপি একটি ভোটও পাবে না এই এলাকায়।’’ তাঁর দাবি, মতুয়াদের ১০০ শতাংশ ভোটই তৃণমূল পাবে। জ্যোতিপ্রিয়র কথায়, ‘‘ওখানে কয়েকটা চ্যাংড়া ছোকরা নরেন্দ্র মোদীর দল করে। মানুষ তাদের সঙ্গে নেই। মতুয়া সমাজও তাদের সঙ্গে নেই।’’ তাঁর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বড়মার সম্পর্ক মা-মেয়ের মতো, অত্যন্ত মজবুত। গোটা ঠাকুরনগর জুড়ে উন্নয়ন হয়েছে। সুতরাং নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বড়মার কোনও দরকারই নেই। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। মতিভ্রম হয়েছে। না হলে ওঁর ইন্টেলিজেন্স ফেল করেছে। ওঁর গোয়েন্দারা যদি ঠিক খবর দিতেন, তা হলে উনি জানতে পারতেন, মতুয়া সমাজের কেউ ওঁকে ভোট দেবে না।’’ পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, ঠাকুরনগরে যদি নরেন্দ্র মোদী জনসভা করেন, পরে সেখানেই পাল্টা জনসভা করবে তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন