তথ্য চাইতেই বিড়াল বেরোল গ্রন্থাগারের

এর মধ্যেই বিশ্বনাথবাবুর হাতে আসে একটি গোপন চিঠি। তিনি বলেন, ‘‘ওই চিঠিতে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফ থেকে জাতীয় গ্রন্থাগারের ডিরেক্টর জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দশ দিনের মধ্যে দিল্লিতে জাতীয় গ্রন্থাগারের শাখা খুলতে হবে। সেই নির্দেশের তারিখ ২০১৬ সালের ১ অগস্ট।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

তথ্য জানার অধিকার আইন প্রয়োগ করতেই ধরা পড়ে গেল জাতীয় গ্রন্থাগারের একটি প্রকল্পের গলদ।

Advertisement

কলকাতার আলিপুরে ঐতিহ্যবাহী যে-জাতীয় গ্রন্থাগার রয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তার কয়েকটি শাখা খুলতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। কী ভাবে শাখা খোলা হবে, তা জানতে চেয়ে ২০১৬-র অগস্টে আরটিআই বা তথ্য জানার অধিকার আইনে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে আবেদন করেন সামাজিক ও আইন সংক্রান্ত বিষয়ের গবেষক-কর্মী বিশ্বনাথ গোস্বামী। উত্তরে তাঁকে জানানো হয়, প্রকল্পটি বিবেচনাধীন রয়েছে। তাতে সন্তুষ্ট না-হয়ে ওই বছরেই মন্ত্রকের উচ্চ আধিকারিকদের কাছে ফের আবেদন করেন তিনি। জানুয়ারিতে তাঁকে জানানো হয়, প্রকল্পটি আলোচনার স্তরেই রয়েছে।

এর মধ্যেই বিশ্বনাথবাবুর হাতে আসে একটি গোপন চিঠি। তিনি বলেন, ‘‘ওই চিঠিতে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফ থেকে জাতীয় গ্রন্থাগারের ডিরেক্টর জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দশ দিনের মধ্যে দিল্লিতে জাতীয় গ্রন্থাগারের শাখা খুলতে হবে। সেই নির্দেশের তারিখ ২০১৬ সালের ১ অগস্ট।’’ তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, বিশ্বনাথবাবুকে মিথ্যে তথ্য দেওয়া হয়েছিল দু’বারই। কারণ, ওই তারিখের পরে আরটিআই–এ আবেদনের জবাবে জানানো হয়েছিল, প্রকল্পটি বিবেচনাধীন। তাঁর অভিযোগ, এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পনামাফিক।

Advertisement

ভুল তথ্য দেওয়া হল কেন, প্রশ্ন তুলে বিশ্বনাথবাবু জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনে মামলা করেন। অগস্টে তার শুনানি হয়। বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘উপযুক্ত জবাব দিতে না-পারায় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের উচ্চ স্তরের এক কর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, গোটা বিষয়টি যেন লিখিত ভাবে আমার কাছে পাঠানো হয়। পরে সেই কর্তাকে শো-কজ করে কমিশন। জানতে চাওয়া হয়, তথ্য গোপন করায় তাঁর সর্বাধিক জরিমানা হবে না কেন?’’

২২ অগস্ট বিশ্বনাথবাবুকে ১১৪ পাতার নথি পাঠায় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রক। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, সব রাজ্যের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে জাতীয় গ্রন্থাগারের শাখা খোলা হবে। তার পরে সেগুলিকে রূপান্তরিত করা হবে ভারতীয় গ্রন্থাগারে। ‘‘আইনসভায় আইন পাশ না-করে এটা করা যায় না। এটা সরকারি সম্পদ। তা নিয়ে বেআইনি কাজকর্ম গুরুতর অপরাধ। আমি আরটিআই না-করলে এটাকে আটকানো যেত কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে,’’ বলছেন বিশ্বনাথবাবু। এই সূত্রে আরটিআই-এ আবেদনের জবাবে তথ্য জানানোর গোটা প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। ক্ষুব্ধ বিশ্বনাথবাবুর বক্তব্য, ভুল তথ্য দিলে আরটিআই-এর উপরে বিশ্বাস উবে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সব রাজ্যের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে জাতীয় গ্রন্থাগারের শাখা খোলার প্রকল্প স্থগিত রাখা হয়েছে। বিচারবিবেচনার জন্য বিষয়টি পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রকের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন