BJP

‘যা চেয়েছিলাম তা হয়নি’, নড্ডা-মোদী-শাহকে চিঠি পাঠিয়ে বিজেপি ছাড়লেন নেতাজির বংশধর

বিজেপির টিকিটে দু’বার নির্বাচনে লড়েছেন। দু’বারই হেরেছেন। দলের সঙ্গে যোগাযোগও অনেক দিনই বিচ্ছিন্ন। এ বার প্রাথমিক সদস্যপদও ছেড়ে দিলেন চন্দ্র বসু। নেতাজির প্রপৌত্রের চিঠি জেপি নড্ডাকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:২৭
Share:

২০১৬ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময়। — ফাইল চিত্র।

যা ভেবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তা হয়নি। তিনি যা যা সাংগঠনিক প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাতে কান দেননি বিজেপির রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এমনটা জানিয়েই বুধবার বিজেপি ছাড়লেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রপৌত্র চন্দ্র বসু। বিজেপির টিকিটে ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা চন্দ্র এই মুহূর্তে বিজেপির কোনও পদে নেই। দলের সঙ্গে দূরত্ব থাকলেও প্রাথমিক সদস্যপদ ছিল। মঙ্গলবার দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে চিঠি পাঠিয়ে সেই যোগটুকুও ছিন্ন করলেন তিনি। নড্ডার পাশাপাশি চিঠির প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে।

Advertisement

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপিতে যোগ দেন চন্দ্র। যোগ দিয়েই প্রার্থী হন ভবানীপুরে। সে বারে মমতার কাছে হারের পরে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূলের মালা রায়ের কাছে হারেন কলকাতা দক্ষিণ আসনে। এর পরে দলের কাজেও তাঁকে বিশেষ দেখা যায়নি। ২০২০ সালে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি পদ থেকেও সরানো হয় তাঁকে। এর পরে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সঙ্গে বিজেপির মতানৈক্য তৈরি হয়। তবে কারণ হিসাবে সে সব দেখাননি চন্দ্র। ইস্তফাপত্রে জানিয়েছেন, তিনি যে লক্ষ্য নিয়ে, যে আদর্শের কথা ভেবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তা পূর্ণ না হওয়াতেই এই সিদ্ধান্ত।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সর্বদল বৈঠক ডাকলেও সাড়া দেয়নি বিজেপি। তবে বৈঠকে গিয়েছিলেন বিজেপির চন্দ্র। এর থেকে অবশ্য তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। কারণ, ইস্তফাপত্রে বিজেপি ছাড়ার কথা বললেও অন্য কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কোনও মন্তব্য নেই।

Advertisement

চিঠিতে চন্দ্র জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়ন যজ্ঞে যোগ দিতে। বিজেপির মঞ্চ ব্যবহার করে নিজস্ব আদর্শের প্রচার চেয়েছিলেন দেশ জুড়ে। চেয়েছিলেন বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যেই নেতাজির আদর্শ প্রচারের জন্য ‘আজাদ হিন্দ মোর্চা’ গঠন হবে। এ সব কিছু না হওয়াতেই তিনি দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চন্দ্র। সঙ্গে লিখেছেন, ‘‘বাংলার মানুষের কাছে বিজেপি কী ভাবে পৌঁছতে পারে তা জানিয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার প্রস্তাবকে উপেক্ষা করা হয়েছে।’’

চন্দ্রের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের বিবাদ প্রায় শুরুর দিন থেকেই। ২০১৮ সালেই ‘‘হিন্দুরা ছাগলের মাংস খাওয়া বন্ধ করুন’’ লিখে টুইট করেছিলেন চন্দ্র। তা নিয়ে আসরে নামেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। পাল্টা টুইটে লেখেন, ‘‘ছাগল নয়, গরুই আমাদের মাতা।’’ বিজেপির এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) নীতি নিয়েও উল্টো মত দিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন চন্দ্র। আবার ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়া ‘নেতাজির টুপি’ চুরি হয়ে গিয়েছে দাবি করে বিতর্ক তৈরি করেন চন্দ্র। সে বার কেন্দ্রের তরফে বিবৃতি দিয়ে চন্দ্রের দাবি ভুল বলে জানানো হয়েছিল। ফলে বিজেপিও চন্দ্রকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অস্বস্তিতে পড়ে। এ বার তিনি দল ছেড়ে দেওয়া নিয়ে অবশ্য রাজ্য নেতারা বিশেষ মন্তব্য করছেন না। তাঁদের যুক্তি, যোগ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে, ইস্তফার চিঠিও দিল্লিতেই পাঠিয়েছেন। সুতরাং, এ নিয়ে কিছু না বলাই ভাল। তবে সেই নেতারাই আড়ালে বলছেন, ‘‘দলে থাকলেও তিনি এত দিন নিজের মতোই ছিলেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছেন শুধুই খবরে আসার জন্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন