অন্ডাল বিমানবন্দরে ৩০০ কোটি লগ্নির সিদ্ধান্ত রাজ্যের

নবান্নের খবর, এই বেসরকারি বিমানবন্দর তৈরি করতে ধার হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। সেই ধার বেশির ভাগটা মিটিয়ে দিতে ৩০০ কোটি টাকা লগ্নি করবে রাজ্য। শিল্প দফতরের এক কর্তা জানান, মাত্র দু’বছরেই বিমানবন্দর চালাতে কার্যত নাভিশ্বাস উঠেছে কর্তৃপক্ষের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:০৭
Share:

অন্ডাল বিমানবন্দর

অন্ডাল বিমানবন্দরের অচলাবস্থা কাটাতে নিজেদের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাবে শিলমোহর পড়েছে।

Advertisement

নবান্নের খবর, এই বেসরকারি বিমানবন্দর তৈরি করতে ধার হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। সেই ধার বেশির ভাগটা মিটিয়ে দিতে ৩০০ কোটি টাকা লগ্নি করবে রাজ্য। শিল্প দফতরের এক কর্তা জানান, মাত্র দু’বছরেই বিমানবন্দর চালাতে কার্যত নাভিশ্বাস উঠেছে কর্তৃপক্ষের। যার জেরে প্রকল্পের মূল অংশীদার সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর সংস্থা পাততাড়ি গোটানোর ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল। তা আটকাতেই রাজ্যের এই উদ্যোগ। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দ্বিতীয় একটি বিমানবন্দর না হলে অদূর ভবিষ্যতে কলকাতা থেকে বিমানে যাতায়াত খুবই জটিল হয়ে পড়বে। সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত।’’

অন্ডাল বিমানবন্দর প্রকল্পে রাজ্যের ১১% অংশীদারিত্ব ছিল। ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পর তা বেড়ে ২৬% হবে। চাঙ্গির অংশীদারিত্ব ৩৬% থেকে কমে হবে ৩১%। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘চাঙ্গি নিজেও সিঙ্গাপুরের সরকারি সংস্থা। চাঙ্গি এবং রাজ্য সরকারের মিলিত অংশীদারিত্ব ৫৭% হওয়ায় প্রকল্পের রাশ থাকবে দুই সরকারের হাতে।’’

Advertisement

নবান্নের এক কর্তা জানান, রাজ্যের অংশীদার ২৬% হওয়ায় বেশ কিছু ক্ষমতাও রাজ্যের হাতে আসছে। এর মধ্যে প্রধান হল, বিমানবন্দরের বোর্ড অব ডিরেক্টরসে দু’জন সদস্য থাকবে রাজ্য সরকারের। ‘ভেটো’ দেওয়ার ক্ষমতাও থাকবে রাজ্যের হাতে। রাজ্যের লগ্নি করা টাকা একটি এসক্রো অ্যাকাউন্টে (যে অ্যাকাউন্টের টাকা নির্দিষ্ট কাজেই ব্যবহার করা যায়) জমা হবে। তা থেকেই ঋণ শোধ করা হবে। রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে-র নেতৃত্বে একটি উচ্চস্তরীয় কমিটিও তৈরি করা হবে। যে কমিটি আর্থিক লেনদেন-সহ বিমানবন্দরের অডিট ও অন্যান্য পরিচালন পদ্ধতির উপরে নজরদারি করবে।

২০০৭-এর সেপ্টেম্বরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পাশে নিয়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী প্রফুল্ল পটেল এই নতুন বিমানবন্দরের কথা ঘোষণা করেন। এর পর বেঙ্গল এরোট্রোপলিস প্রজেক্ট লিমিটেডের সঙ্গে শিল্পোন্নয়ন নিগমের চুক্তি হয়। চাঙ্গি ইন্টারন্যাশনাল এই প্রকল্পে প্রযুক্তিগত সহায়তার সঙ্গে ৩৬% অংশীদারিও হাতে নেয়। ভারতে এটাই তাদের প্রথম লগ্নি। তার পরে জয়পুর এবং অমদাবাদ বিমানবন্দর পরিচালনার ভার নিতে চেয়ে দরপত্র জমা দেয় চাঙ্গি। তবে সেখানে দু-দু’বার তাদের আবেদন নাকচ হয়েছে।

প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১১ সালেই অন্ডাল বিমানবন্দর চালু হওয়ার কথা ছিল। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে এবং জমির নীচে কয়লা ব্লক থাকায় বাধা আসে। শেষমেশ সব জট কাটিয়ে ডিজিসিএ উড়ান শুরুর অনুমতি দেয় ২০১৫ সালে। রাজ্য সরকারের অনুরোধে এয়ার ইন্ডিয়া কিছু দিন অন্ডাল থেকে বিমান চালালেও তার পর বাণিজ্যিক কারণে আর কোনও বড় উড়ান সংস্থা এগিয়ে আসেনি। রাজ্য সরকার জ্বালানির উপরে ভর্তুকির দেওয়ার কথা ঘোষণা করা সত্ত্বেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। এ বার রাজ্যের বিনিয়োগ বাড়িয়ে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় কি না, সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement