ফের বদল নিয়োগ-কমিটিতে

পঞ্চায়েতে তবু স্থায়ী পদ ফাঁকা

ফের বদল ঘটানো হল পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে স্থায়ী পদে নিয়োগ করার নিয়মকানুন। জেলায় নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির মাথায় বসানো হল সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের।

Advertisement

নুরুল আবসার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪৪
Share:

ফের বদল ঘটানো হল পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে স্থায়ী পদে নিয়োগ করার নিয়মকানুন। জেলায় নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির মাথায় বসানো হল সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের। সরানো হল কমিটিতে থাকা মন্ত্রী, পরিষদীয় সচিব এবং বিধায়কদের। নতুন কমিটিগুলি গড়া হবে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে।

Advertisement

এই নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলেই তিন বার পাল্টানো হল পঞ্চায়েতের ওই দুই স্তরে স্থায়ী পদে নিয়োগের নিয়মকানুন। কিন্তু রাজ্য জুড়ে ওই দুই স্তরে বিভিন্ন পদ ফাঁকাই পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর। নিয়ম পাল্টালেও নিয়োগ আর হচ্ছে কই? অথচ, বাড়ছে কাজের চাপ। এক-এক জন কর্মী একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়িত্ব সামলাতে নাজেহাল হচ্ছেন।

একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্বাহী সহকারী, সচিব, নির্মাণ সহায়ক, সহায়ক এবং পঞ্চায়েত কর্মী— এই পাঁচটি স্থায়ী পদে নিয়োগ হয়। পঞ্চায়েত সমিতিতে নিয়োগ হয় সহ-সচিব পদে। বাম আমলে নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটিতে থাকতেন জেলা সভাধিপতির প্রতিনিধি এবং কর্মাধ্যক্ষরা। কমিটির চেয়ারম্যান হতেন জেলাশাসক। ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে এই কমিটির গঠনগত বদল ঘটে। কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে জেলাশাসকদের রাখা হলেও জেলা সভাধিপতির প্রতিনিধি এবং কর্মাধ্যক্ষদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ওই সব শূন্য স্থানে আনা হয় বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক কর্তার দাবি ছিল, বাম আমলে যে নিয়মে নিয়োগ হতো তাতে দুর্নীতির সুযোগ ছিল। জেলা সভাধিপতির প্রতিনিধি এবং কর্মাধ্যক্ষদের হাতে যে নম্বর ছিল তার অপব্যবহার করে অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্য প্রার্থীকে বেশি নম্বর দিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়া হতো।

Advertisement

কিন্তু বছর খানেক চলার পরে তৃণমূল সরকারের গড়া কমিটিরই নিয়মকানুন বদলায়। জেলাশাসককে দেওয়া হয় ভাইস চেয়ারম্যানের পদ। কমিটির মাথায় বসানো হয় মন্ত্রী, পরিষদীয় সচিব এবং বিধায়কদের। এর পরে সম্প্রতি রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর এক নির্দেশে জানিয়েছে, জেলায় জেলায় ওই কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হল মন্ত্রী, পরিষদীয় সচিব এবং বিধায়কদের। ফের কমিটির মাথায় বসানো হল জেলাশাসকদের। কমিটির সদস্য অবশ্য থাকছেন বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা। নতুন কমিটির মাধ্যমে জেলাশাসক পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে কর্মী নিয়োগ করবেন।

কেন কমিটি থেকে সরানো হল মন্ত্রী, পরিষদীয় সচিব বা বিধায়কদের?

পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক কর্তার দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পরিষদীয় সচিব পদটি উঠে গিয়েছে। ফলে, কমিটির মাথায় তাঁদের বসিয়ে রাখা অর্থহীন। তাই নতুন কমিটি। তবে, দফতরের অন্য একটি সূত্র থেকে আবার জানা গিয়েছে, পরিষদীয় সচিব, মন্ত্রী বা বিধায়কদের নেতৃত্বাধীন কমিটি শাসকদলেরই বিভিন্ন মহলের চাপের শিকার হয়ে নিয়োগের কাজটি করতে পারছিল না। বর্ধমানে নিয়োগের একটা চেষ্টা হয়। তা নিয়ে বিস্তর গোলমাল বাধে শাসকদলেরই অন্দরে। দুর্নীতিরও অভিযোগ ওঠে। এই সব কারণেই ফের জেলাশাসকদের বসানো হল নিয়োগ-কমিটির মাথায়।

নিয়োগ-কমিটিতে বারবার বদল হলেও আসল কাজ অর্থাৎ কর্মী নিয়োগের কাজটি কিন্তু সে ভাবে হয়নি। অস্থায়ী ভিত্তিতে ‘ডেটা-এন্ট্রি অপারেটর-এর মতো কিছু পদে কালেভদ্রে নিয়োগ হলেও পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী কর্মী নিয়োগ হয়নি বহু বছর। শুধু হাওড়া জেলাতেই পঞ্চায়েতে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে সেই ২০০৯ সাল থেকে। এই মুহূর্তে জেলার ১৫৭টি পঞ্চায়েতে নির্বাহী সহকারীর পদ ফাঁকা রয়েছে ৫৮টি, সচিবের পদ ফাঁকা ৫৬টি, কর্মীর পদ ফাঁকা ১১৮টি, সহায়কের পদ ফাঁকা রয়েছে ৬০টি। চলতি বছরের গোড়ায় মাত্র ৬০ জন নির্মাণ সহায়ক নিয়োগ করা হয় এই জেলায়। তারপরেও ২৫টি নির্মাণ সহায়কের পদ ফাঁকা আছে। ফলে, এক-একজন কর্মীকে একাধিক পঞ্চায়েতের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। ১৪টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ৮টিতে সহ-সচিব পদ ফাঁকা। একই চিত্র রাজ্য জুড়েই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন