100 Days Work

১০০ দিনের কাজের টাকা বাকি কোন কোন রাজ্যের? তৃণমূলের প্রশ্নে সংসদে কেন্দ্রের দেওয়া তালিকায় নেই বাংলার নামই!

রাজ্যসভায় কেন্দ্র জানিয়েছে, ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়ার জন্য পর্যায়ক্রমে দু’টি কিস্তিতে তহবিল প্রকাশ করে সরকার। শ্রম বাজেট, কাজের চাহিদা, তহবিলের ব্যবহারের গতি, সামগ্রিক কর্মক্ষমতা, রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রয়োজনীয় নথির সাপেক্ষে সেগুলো তৈরি করা হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৫ ১৫:৪০
Share:

১০০ দিনের কাজের প্রকল্প সম্পর্কে রাজ্যসভায় জবাব দিয়েছে কেন্দ্র। শুরু হয়েছে বিতর্ক। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

১০০ দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ টাকা ঢোকেনি রাজ্যের তহবিলে। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যে রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রশ্নের জবাব দিল বিজেপি সরকার। কেন্দ্রের লিখিত জবাবে সমস্ত রাজ্যের নাম, বকেয়া এবং বরাদ্দের হিসাব দেওয়া হলেও পশ্চিমবঙ্গের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এই নিয়ে শুরু হল নয়া বিতর্ক। তৃণমূলের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক যুদ্ধে এঁটে উঠতে না-পেরে বাংলাকে দেশের মানচিত্র থেকে মুছে দিতে চাইছে মোদী সরকার। আবার বাংলা এবং বাঙালি বিদ্বেষের অভিযোগ করেছে ঘাসফুল শিবির। একই সঙ্গে তৃণমূল বলছে, বাংলার প্রায় ১০ কোটি মানুষ এই অপমানের জবাব দেবে আগামী বিধানসভা ভোটে।

Advertisement

তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের প্রশ্নে কেন্দ্র যে লিখিত জবাব দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে একশো দিনের কাজের জন্য ১৪ কোটি ৮০ লক্ষ পরিবারের নাম নথিভুক্ত হয়েছিল। প্রত্যেক পরিবার পিছু কর্মদিবস তৈরি হয়েছে ৫২.০৮ এবং কাজ করেছেন মোট ৮ কোটি ৩৪ লক্ষ মানুষ। ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে এই পরিসংখ্যান হল ১৫ কোটি ৯৯ লক্ষ। কর্মদিবস তৈরি হয়েছে পরিবারপিছু ৫০.২৩টি। কাজ করেছেন ৭ কোটি ৮৮ লক্ষ মানুষ। তার পর উল্লেখ করা হয়েছে, মহাত্মা গান্ধী এনআরইজিএ একটি চাহিদা নির্ভরশীল মজুরি-কর্মসংস্থান প্রকল্প। যখন কোনও উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে না, তখন কর্মসংস্থানের একটি বিকল্প এটি। তার পর বলা হয়েছে, মনরেগার অধীনে ইচ্ছুক গ্রামীণ পরিবারগুলিকে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আর প্রকল্পের অর্থ সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠায় কেন্দ্র।

রাজ্যসভায় কেন্দ্র জানিয়েছে, ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়ার জন্য পর্যায়ক্রমে দু’টি কিস্তিতে তহবিল প্রকাশ করে সরকার। প্রতিটি কিস্তিতে এক বা একাধিক কিস্তি থাকে। শ্রম বাজেট, কাজের চাহিদা, তহবিলের ব্যবহারের গতি, সামগ্রিক কর্মক্ষমতা, রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রয়োজনীয় নথির সাপেক্ষে সেগুলো তৈরি করা হয়। নিয়ম হল, প্রতি আর্থিক বছরের শুরুতে পূর্ববর্তী বছরের বাকি থাকা অর্থ শোধ করে দেওয়া হয়। সেই নিয়ম মেনে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের ‘অমীমাংসিত মজুরির’ অর্থ ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে (২১ জুলাই পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী) ৪৪,৪৭৯.৭৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে রাজ্যগুলিকে। এই প্রকল্পের অধীনে আপাতত কোনও অর্থ বাকি নেই। পরিশেষে বলা হয়েছে, মজুরিহার গণনার বর্তমান পদ্ধতি ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সরকার মজুরিহার নিয়েও বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। গত বছরের তুলনায় গড়ে ৫ শতাংশ এবং পূর্ববর্তী ৫ বছর থেকে প্রায় ২৯ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন রাজ্যের সরকার তাদের নিজস্ব উৎস থেকে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক বিজ্ঞাপিত মজুরি হারের চেয়ে বেশি মজুরিও প্রদান করতে পারে। এর পর বাংলা বাদে ৩৩টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তালিকা দিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্যের শাসকদল প্রশ্ন তুলেছে এখানেই। রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘আমাদের (তৃণমূলের) দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রশ্নের যে জবাব এসেছে, সেটা দেখে আমরা হতবাক!’’

Advertisement

রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের নাম না-থাকা নিয়ে তাঁরা বিস্মিত বলে জানিয়েছেন ঋতব্রত। তিনি বলেন, ‘‘বাংলা কি ভারতবর্ষের মানচিত্রের বাইরে? রাজ্যের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে বাংলার নাম-ই নেই!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে যুদ্ধ করতে পারছেন না বলে বাংলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বাংলার ন্যায্য, হকের টাকা আটকে রেখেছেন, দিচ্ছেন না, এগুলো তো ছিলই। বাংলাভাষীদের প্রতিটি রাজ্যে আক্রমণ করছেন। এখন সংসদে প্রশ্নের উত্তরেও বাংলার নাম নেই! এ ভাবে বাংলাকে ব্রাত্য করতে পারবেন না। সামনের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ আপনাদের ব্রাত্য করে দেবে।’’

উল্লেখ্য, তৃণমূলের অভিযোগ, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ ১০০ দিনের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। সেই বাবদ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে রাজ্যের। পর পর নির্বাচনে তৃণমূলের কাছে পরাজিত হওয়ায়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা হয়েছে বলে লাগাতার অভিযোগ করে আসছেন মমতা-অভিষেকরা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত রাজ্যের মানুষকে বঞ্চনা করা হচ্ছে বলেও দাবি তাঁদের। সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্ট একটি নির্দেশে বলেছে, আগামী ১ অগস্ট থেকে ১০০ দিনের কাজ শুরু করতে হবে। কেন্দ্রের উদ্দেশে বলা হয়, দুর্নীতি রুখতে দিল্লি নজরদারি চালাতে পারে, শর্ত দিতে পারে। কিন্তু প্রকল্প অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখতে পারে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement