—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রাজ্যে পুরনো, অব্যবহৃত বা পরিত্যক্ত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার প্রক্রিয়া আরও সহজ হল। শুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়া নতুন নিয়মে আগের তুলনায় কম কাগজপত্র জমা দিয়েই মালিকেরা রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে পারবেন। বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই নতুন নিয়ম জানানো হয়েছে। পরিবহণ দফতরের দাবি, এই পদক্ষেপে যেমন প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়বে, তেমনই দীর্ঘ দিন ধরে চলা একাধিক জটিলতাও দূর হবে। পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন পর্যন্ত কোনও গাড়ি স্ক্র্যাপ বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও মালিকেরা সেটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতেন না। এর ফলে নতুন গাড়ির জন্য পারমিট নবীকরণ বা ‘এন্ডোর্সমেন্ট’-এর ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। বিশেষ করে বাহন অ্যাপে ব্যাকলগ ডেটা বা পুরনো গাড়ির তথ্য না-মুছলে নতুন গাড়ি যুক্ত করার আবেদন আটকে যাচ্ছিল। এর ফলে বহু গাড়িচালক ও পরিবহণ মালিককে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল।
নতুন নিয়মে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে রাজ্য সরকার বাহনে প্রযুক্তিগত আপডেট এনেছে। নতুন ব্যবস্থায় আর দস্তাবেজের বৈধতা খুঁটিয়ে পরীক্ষা না করেই রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা যাবে। তবে এটি সম্পূর্ণ ভাবে ধারা ৫৫ অনুযায়ী কার্যকর হবে এবং কর সংক্রান্ত রেকর্ড ছাড়া বাকি নথি জমা দেওয়ার ঝক্কি থেকে মুক্তি মিলবে। অর্থাৎ, রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে গিয়ে আলাদা আলাদা নথি প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। কেবলমাত্র করের বকেয়া মিটিয়ে দিলেই প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে। পরিবহণ দফতর জানিয়েছে, নতুন নিয়মে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। গাড়ির বাতিল হওয়ার দিন পর্যন্ত সমস্ত কর বা অতিরিক্ত চার্জ পরিশোধ করতে হবে মালিককে। পাশাপাশি জমা দিতে হবে একটি ইন্ডেমনিটি বন্ড। এর মাধ্যমে গাড়ির মালিক প্রতিশ্রুতি দেবেন যে, ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট গাড়ি সংক্রান্ত কোনও মামলা বা আইনি জটিলতা দেখা দিলে তার দায়ভার তিনি নিজেই বহন করবেন।
পরিবহণ দফতরের দাবি, এই বন্ড জমা দেওয়ার ফলে প্রশাসনের উপর থেকে অতিরিক্ত দায়ভার কমবে এবং আইনি ঝুঁকি থেকেও মুক্তি মিলবে। নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার ফলে এক দিকে যেমন পরিবহণ দফতরের কাজের গতি বাড়বে, অন্য দিকে গাড়ির মালিকদেরও আর অতিরিক্ত নথি জোগাড় করতে সময় ও খরচ নষ্ট হবে না। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটিই হবে সহজ, স্বচ্ছ ও দ্রুত। বেসরকারি পরিবহণ ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপের ফলে রাজ্যের যানবাহন রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত তথ্যভান্ডার আরও পরিষ্কার হবে। দীর্ঘ দিন ধরে পরিত্যক্ত হওয়া বহু গাড়ির নাম এখনও নথিভুক্ত থেকে গিয়েছে, যা প্রশাসনিক কাজকর্মে বিভ্রান্তি তৈরি করে। নতুন প্রক্রিয়ায় সেই সমস্যার সমাধান করবে বলেই আশা। বেসরকারি পরিবহণ মালিক সংগঠনগুলির বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত বহু পুরনো দাবিকে মেনে নেওয়া। তারা জানিয়েছে, এত দিন কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে অযথা দেরি হচ্ছিল, আর অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতিরও সুযোগ তৈরি হচ্ছিল। এখন ডিজিটাল সিস্টেমে সহজ বাতিলের সুবিধা মেলায় সাধারণ মানুষের সুবিধা হবে।
সব মিলিয়ে রাজ্যে পুরনো গাড়ি বাতিল ও নতুন গাড়ি নথিভুক্তির প্রক্রিয়ায় এক নতুন দিগন্ত খুলল। রাজ্য সরকারের আশা, নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার ফলে পরিবহণ খাতে জট কমবে এবং দ্রুত পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ বাড়বে। তবে সরকারের এই বিজ্ঞপ্তি জারি নিয়ে অসন্তুষ্ট বেসরকারি গাড়িমালিকেরা। এ বিষয়ে সিটি সাব আর্বান বাস সার্ভিসসের নেতা টিটু সাহা বলেন, ‘‘যখন একটি গাড়ি বাতিল হবে, তখন সম্পর্কটি পরিবহণ দফতর এবং বেসরকারি গাড়ির মালিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে ভাল হত। সেখানে তৃতীয় বা চতুর্থ পক্ষ বা অন্য কারও দায় নেওয়ার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের থাকার কথা নয়।’’