প্রতীকী ছবি।
হাতিয়ার প্রযুক্তি। তার হাত ধরে এ বার স্মার্ট হচ্ছে ধান কেনাও। কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার এখন এক সুতোয় বাঁধা।
উত্তর দিনাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে এক কিলোগ্রাম ধান কেনা হলেও সেই তথ্য মুহূর্তে জমা পড়ছে খাদ্য দফতরে। দিন ফুরনোর আগে তার টাকাও জমা পড়ছে চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। তবে তার জন্য আধার নম্বর নিচ্ছে না রাজ্য।
গত বছরের মতো সহায়ক মূল্যে ধান বেচে চেক নিয়ে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ানো নেই। চেকে ভুল থাকলে তা নিয়ে ছোটাছুটির হ্যাপা নেই এ বার। এ তো গেল চাষির সুবিধার কথা। খাদ্য দফতরের কর্তারা বলছেন, নতুন ব্যবস্থায় অস্বচ্ছতার কোনও জায়গাই নেই। ফলে চাষিদের হয়রানি প্রায় শূন্য। তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে। গত বছর এই সময় খাদ্য দফতর ধান কেনা শুরুই করতে পারেনি। আর এ বার মাস ফুরনোর আগেই ধান সংগ্রহে এ মাসের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেছে তারা।
কী ভাবে সম্ভব হল এমনটা?
গত বছর চেক দিয়ে ধান কিনতে গিয়ে কার্যত নাকানিচোবানি খেতে হয়েছিল সরকারকে। কোথাও চেকে চাষির নাম লেখা ভুল, কোথাও আবার ভুল টাকার অঙ্কে। খাদ্য দফতরের কর্তারা মানছেন, চেক নিয়ে চাষিদের হয়রানি হয়েছিল বিস্তর। তাই এ বার পুরো ব্যবস্থাই অনলাইন করে ফেলা হয়েছে।
এ বার ধান সংগ্রহের জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। যে সব শিবিরে ধান কেনা হচ্ছে, সেখানকার ল্যাপটপে থাকছে সেই সফটওয়্যার। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বললেন, ‘‘যে সব স্বনির্ভর গোষ্ঠী ধান কিনছে, তাদের আমরা একটি করে ট্যাব দিয়েছি। সেই ট্যাবেও থাকছে ওই একই সফটওয়্যার।’’
সেই সফটওয়্যারে চাষির সব তথ্য দিতে হচ্ছে। ধানের পরিমাণ, মোবাইল নম্বর, থাকছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিশদ তথ্যও। ধান কেনার পরে সেই তথ্য সফটওয়্যারে আপলোড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা জমা পড়ছে খাদ্য দফতরের সার্ভারে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ধান বিক্রির বিশদ তথ্য এসএমএস-এর মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে চাষির মোবাইলে।
তথ্য খাদ্য দফতরের সেন্ট্রাল সার্ভারে জমা পড়ার ফলে কবে কোথায় কত ধান কেনা হল, তা সঙ্গে সঙ্গে জেনে যাচ্ছেন দফতরের আধিকারিকরা। তার ফলে শিবিরে লুকোচুরির কোনও সুযোগ থাকছে না। গত বার চেকে ধান কেনার ফলে দফতরে বিস্তারিত হিসেব আসতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছিল। তার ফলে চাষিরা শিবিরের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েছিলেন।
শিয়রে পঞ্চায়েত ভোট। এই অবস্থায় চাষিদের আস্থা জয় করাটাই ছিল খাদ্য দফতরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই কাজে এ বার সরকার সফল বলেই দাবি দফতরের কর্তাদের।
এ বছর ৫২ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কেনার কথা। ডিসেম্বরে পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল।
খাদ্য দফতরের তথ্য, মাসের মাঝখানেই তিন লক্ষ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়ে গিয়েছে। চাষিরা যাতে টাকা সময়মতো পান, তার জন্য খাদ্য দফতরের উপরেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কর্মীদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। তারা শুধুমাত্র চাষিদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমার কাজই করছেন।