জঙ্গলমহল ও ডুয়ার্স দেখুন কাচের ট্রেনে

‘উইন্ডো সিট’ বা জানলা-ধারের আসন নিয়ে কাড়াকাড়ির দরকার নেই আর। কেননা এ বার এমন ট্রেন আসছে, যাতে সেই অর্থে জানলাই নেই অথবা ছাদে বা দু’পাশে পুরোটাই জানলা! ডাইনে-বাঁয়ে চোখ ফেরালে বা ছাদ দিয়ে তাকালেই ধরা দেবে প্রকৃতির শোভা। মেঝে বাদে গোটা কামরা, এমনকী ছাদও যে কাচের!

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৪
Share:

কাচে মোড়া কামরা এমনটাই হবে।

‘উইন্ডো সিট’ বা জানলা-ধারের আসন নিয়ে কাড়াকাড়ির দরকার নেই আর। কেননা এ বার এমন ট্রেন আসছে, যাতে সেই অর্থে জানলাই নেই অথবা ছাদে বা দু’পাশে পুরোটাই জানলা! ডাইনে-বাঁয়ে চোখ ফেরালে বা ছাদ দিয়ে তাকালেই ধরা দেবে প্রকৃতির শোভা। মেঝে বাদে গোটা কামরা, এমনকী ছাদও যে কাচের!

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে এক বছরের মধ্যেই এই ধরনের ট্রেন পর্যটকদের উপহার দিতে চায় রেল। ভরপুর নিসর্গের ডুয়ার্স আর রাঢ়বাংলার জঙ্গলমহল চিরে যাওয়া লাইনে ওই ট্রেন চালানোই তাদের লক্ষ্য। কাচের কামরায় বসে পাহাড়-নদী-জঙ্গল-ঝর্না-চা বাগানের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পর্যটকেরা ভিড় করবেন বলে আশা করছে রেল। আপাতত এই ধরনের দু’টি
বিশেষ কামরার জন্য রেল মন্ত্রকের কাছে আবেদন জমা দিয়েছে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন বা আইআরসিটিসি।

এই ধরনের কামরাওয়ালা ট্রেনকে বলে ‘গ্লাস-ডোম ট্রেন’, কেউ কেউ বলেন ‘সানরুফ এক্সপ্রেস’। আলাস্কায় এই ট্রেনে সফর পর্যটকদের কাছে আকর্ষক। এ বার ভারতেও শুরু হতে চলেছে কাচে মোড়া ট্রেনে ভ্রমণ।

Advertisement

তবে আলাস্কায় যেমন ট্রেনের সব কামরাই কাচের, ভারতে এখনই তা করা যাচ্ছে না। একটি সাধারণ ট্রেনের সঙ্গে দু’টি কাচের কামরা জুড়ে দেওয়া হবে। ভাড়া অবশ্যই বেশি। কারণ, একেই তো বিলাসবহুল কামরা, সব আসনই গদি-মোড়া। তার উপরে বিশেষ ধরনের পরিষেবা দেবে আইআরসিটিসি। ওই সফরে দামি রেস্তোরাঁর খাবার একাধিক বার পাবেন যাত্রীরা। সঙ্গে পাওয়া যাবে নরম পানীয়, ফলের রস, মকটেল। ভবিষ্যতে বিয়ার, ওয়াইনের মতো মদিরাও যাত্রীদের দিতে চায় রেল।

চেন্নাইয়ের পেরামবুরে রেলের ইনটিগ্র্যাল কোচ ফ্যাকট্রিতে এই ধরনের চারটি কাচ-কামরা তৈরি হচ্ছে। এক-একটি কামরা তৈরির খরচ চার কোটি টাকা। প্রথম চারটি কামরা তৈরি হয়ে যাবে মাস তিনেকের মধ্যে। রেলের পরিকল্পনা অনুযায়ী তার মধ্যে দু’টি যাবে কাশ্মীরে আর অন্য দু’টি কামরা পাবে বিশাখপত্তনম থেকে আরাকু ভ্যালি যাওয়ার কিরান্ডুল প্যাসেঞ্জার ট্রেন। পাহাড়-গুহা-জঙ্গল পথের শোভা দেখতে দেখতে সফর করবেন বলে বিশাখপত্তনম থেকে আরাকু গাড়িতে না-গিয়ে ওই ট্রেন পছন্দ করেন বহু পর্যটক। পরের ধাপে দু’টি কামরা আসবে পূর্ব ভারতে। হাওড়া থেকে পুরুলিয়া হয়ে রাঁচির কোনও ট্রেনে একটি কামরা এবং নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ডুয়ার্স হয়ে গুয়াহাটির কোনও ট্রেনে অন্য কাচ-কামরাটি জুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে রেল।

কাচমোড়া কামরা তৈরির খরচ জোগাচ্ছে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক। রেল তাদের কলাকৌশল এবং প্রযুক্তির সাহায্যে কামরা তৈরি করছে এবং রেলপথ ব্যবহার করতে দেওয়ার মাধ্যমে পরিকাঠামো দিচ্ছে। এই বিশেষ বিলাসবহুল কামরায় যাত্রী তথা পর্যটক পরিষেবা দেবে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ করবে আইআরসিটিসি।

আইআরসিটিসি-র পূর্বাঞ্চলের গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার দেবাশিস চন্দ্রের আশা, পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে কাচের কামরাওয়ালা ট্রেন এক বছরের মধ্যেই চালানো যাবে। উত্তরবঙ্গ-অসম এবং জঙ্গলমহল-ঝাড়খণ্ড দিয়ে এই ধরনের দু’টি ট্রেন চলবে।

আইআরসিটিসি মনে করে, পর্যটকদের কাছে ডুয়ার্স চিরে যাওয়া প্রাকৃতিক শোভা ও হাতির করিডর বিশাখপত্তনম-আরাকুর রেলপথের চেয়ে কম আকর্ষক নয়। দেবাশিসবাবু জানান, দিনের আলো ছাড়া প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করা যাবে না। তাই এক প্রান্তের স্টেশন থেকে ছেড়ে অন্য প্রান্তিক স্টেশনে ট্রেনটি যাতে দিনে-দিনেই পৌঁছে যেতে পারে, সেটা মাথায় রেখে ট্রেন বাছতে হবে। খুব দ্রুত গতির ট্রেন চলবে না। ‘‘এমন ট্রেন বাছতে হবে, যার গতি কম। রাজধানী বা শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো হুশ করে বেরিয়ে যাওয়ার ট্রেনে নিসর্গ উপভোগের বিশেষ সুবিধে হবে না,’’ বলছেন দেবাশিসবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন