পেসমেকার নিয়েই দিব্বি বেড়ে উঠছে শিবাংস। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
খড়দহ ঘণ্টাপুকুরের বাসিন্দা মামন দে-র ছেলে হয়েছিল গত বছরে অগস্ট মাসের গোড়ার দিকে। জন্মলগ্নেই ধরা পড়েছিল নবজাতকের শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হচ্ছে না। সেই ছেলে শিবাংস এক বছর পার করে দিল। আর পাঁচটা ওই বয়সের শিশুর মতোই চঞ্চল সে।
শিবাংসের দিন কয়েক পরে এসএসকেএমেই জন্ম নেওয়া মিরাজেরও জন্মের পরে একই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এখন গুটি গুটি পায়ে বীরভূমের লাভপুরের বাড়িতে হেঁটে বেড়ায় শিশুটি।
যে শিশুদের বাঁচার সম্ভবনাই ছিল না, তারা স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেল কী ভাবে? আসলে জন্মের পর থেকেই পেসমেকার সম্বল করে বেঁচে আছে ওরা। আর হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক সঙ্কোচন প্রসারণের জন্য আজীবন তাদের বয়ে বেড়াতে হবে ওই যন্ত্রটি।
কলকাতায় কর্পোরেট হাসপাতালে নবজাতকের শরীরে পেসমেকার বসানো শুরু হয়েছে বছর তিনেক আগে। তাও সেটা খুব বেশি নয়। এখন তা শুরু হয়েছে সরকারি হাসপাতালেও। এসএসকেএম হাসপাতালে গত এক বছরে পেসমেকার বসিয়ে বাঁচানো গিয়েছে দুই শিশু শিবাংস এবং মিরাজকে।
বাড়িতে এক বছর চার মাসের ছটফটে শিবাংসকে সামলাতে-সামলাতে মামন দে বলেন, ‘‘প্রথম এক বছর নিয়ে ডাক্তারবাবুরা একটু চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু কিচ্ছু সমস্যা হয়নি আমার ছেলের।’’ একই কথা বলছেন মিরাজের মা নুরেজা বিবি-ও।
এসএসকেএমের নিওনেটাল কার্ডিওলজিস্ট গৌতম সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, স্বাভাবিক বৃদ্ধি হলেও, এই বাচ্চা-রা পরবর্তীকালে খুব বেশি হুটোপাটি করতে পারবে না। কারণ, এখন এদের পেসমেকারের ব্যাটারিটা থাকে পেটের মাংসপেশীর ঠিক নীচে। সেখান থেকে তার গিয়েছে পেসমেকারে। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘শিবাংস আর মিরাজ-এর কেস দুটি ছিল আমাদের কাছে কঠিন পরীক্ষা। তাতে আমরা উত্তীর্ণ বলেই এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে।’’
শহরের একটি কর্পোরেট হাসপাতালের নিওনেটাল কার্ডিওলজিস্ট বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বাইপাস সংলগ্ন তাঁদের হাসপাতালে প্রতি দু’ মাসে বা আড়াই মাসে এমন একটি করে অস্ত্রোপচার হয়। নিওনেটাল কার্ডিওলজিস্ট নিখিলেশ খাওয়াসের কথায়, ‘‘এসএসকেএমের মতো সরকারি হাসপাতালে নিওনেটাল পেসমেকার বসানো শুরু হওয়াটা খুব ভাল খবর। বহু দরিদ্র অভিভাবককে এর ফলে চোখের সামনে নবজাতকের মৃত্যু দেখতে হবে না।’’
কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে গত ২৮ নভেম্বরই নিখিলেশবাবু ও গৌতমবাবু এক ৩৬ ঘণ্টা বয়সী শিশুর শরীরে পেসমেকার বসিয়েছেন। শিলিগুড়ির সেই নবজাতকও শিশুকন্যাও ভাল আছে।
সরকারি হাসপাতালে এই ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্য অর্থ মেলে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম’ বা আরবিএসকে থেকে। প্রকল্পের জাতীয় উপদেষ্টা অরুণ সিংহ জানাচ্ছেন, ২০১৩ সাল থেকে শুরু হওয়া আরবিএসকে-র আওতায় ৩৫ কোটি শিশুকে ইতিমধ্যে স্ক্রিনিং করা হয়ে গিয়েছে। তাদের মধ্যে একটা বড় অংশের শিবাংসদের মতো ‘কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ’ রয়েছে। সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজে নবজাতকদের পেসমেকার বসানোর কাজ শুরু করা গেলে দেশের নবজাতক মৃত্যুর পরিসংখ্যানটা বদলে দেওয়া যাবে বলে অরুণবাবুর দাবি।