শাহনুর আলম
গ্রামের অতি পরিচিত ‘ডাক্তার’-এর বিরুদ্ধে জঙ্গি যোগাযোগের অভিযোগ ওঠায় বিস্মিত বরপেটার সর্থেবাড়ি এলাকার চতলা গ্রাম। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এমআইএ) গত কাল চতলার শাহনুর আলম ওরফে ডাক্তারের খবর দিলে ৫ লক্ষ টাকার ইনাম ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাকারিয়া নামে শাহনুরের এক ভাইকেও আটক করেছে পুলিশ।
শাহনুরের বাবা ও ভাই আজ জানান, বর্ধমানের শিমুলিয়া মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র শাহনুর বহু দিন থেকেই আলাদা থাকে। তার সঙ্গে পরিবারের অন্যদের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানান শাহনুরের বাবা মুজিবর রহমান। স্থানীয় মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুজিবরের বক্তব্য, “শাহনুরের কাজকর্ম নিয়ে বাড়ির লোকের কোনও ধারণাই নেই। সাত দিন আগে দুই ছেলে ও বউকে নিয়ে শাহনুর বাড়ি এসেছিল। তার পর থেকেই তারা সপরিবার উধাও।”
গ্রাম সূত্রের খবর, ৩৩ বছরের শাহনুর ‘ডাক্তার’ হিসেবে ভাল পসার জমিয়েছিল। প্রথাগত শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকা এই গ্রামে কবিরাজি-হেকিমি ওষুধ দিয়ে ‘ডাক্তার’ হিসেবে নাম কিনে ফেলে শাহনুর। শাহনুর বাজারে ঘুরে কখনও দাঁত কখনও বা বাতের ব্যথার ওষুধ বিক্রি করত। তার বাড়িতেও বিভিন্ন মানুষ ওষুধ নিতে আসত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সব এলাকায় হাফিজি মাদ্রাসা না থাকায় সাধারণত গ্রামের ছেলেদের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়তে পাঠানো হয়। শিমুলিয়া মাদ্রাসার সঙ্গে শাহনুরের যোগাযোগ বা তার বাড়িতে বহিরাগতদের যাতায়াত নিয়েও তাই তার পরিবার বা গ্রামের মানুষ কখনও কিছু সন্দেহ করেনি।
বর্ধমানের মঙ্গলকোটের এই শিমুলিয়া মাদ্রাসায় জেহাদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। শিমুলিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা বোরহান শেখের জমির উপর এই মাদ্রাসা তৈরি হয়েছিল। খাগড়াগড় কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত ইউসুফ শেখ ছিল এই মাদ্রাসার পরিচালক। বোরহান ও ইউসুফ শেখের সন্ধানেও পুরস্কার ঘোষণা করেছে এনআইএ। একই ভাবে শিমুলিয়া মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত শাহনুরের জন্যও ঘোষিত পুরস্কারের পরিমাণ পাঁচ লক্ষ টাকা।
বরপেটার ধৃতদের জেরা করে এবং বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে পুলিশ এবং এনআইএ জানতে পেরেছে, উধাও কওসরের সঙ্গেও শাহনুরের যোগাযোগ ছিল। হাওয়ালার মাধ্যমে শাহনুরের কাছে বাংলাদেশ থেকে টাকা আসত। সেই টাকা সে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানে তার স্ত্রী সুসেনার নামে ‘দান’ হিসেবে পাঠাত। দানের পরিমাণ সব সময়ই ছিল লক্ষাধিক। পাশাপাশি, জাল নোটের কারবারের সঙ্গেও তার যোগ ছিল বলে পুলিশের সন্দেহ।
রাজ্য পুলিশের ডিজি খগেন শর্মা বলেন, “কোনও ডিগ্রি ছাড়াই ডাক্তার হিসেবে পসার গড়েছিল শাহনুর। বাংলাদেশের জামাতের সঙ্গে তার যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে। আমরা তাকে ও আরও ৬ জনকে খুঁজছি।” তাঁর কথায়, “অসমে জিহাদি সংগঠনের ঘাঁটি নতুন কথা নয়। ১৯৯৮ সাল থেকেই অসমে বিভিন্ন জিহাদি সংগঠনের সদস্যদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রাজ্যে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজের উপরেও নজর রাখছি।” রাজ্য পুলিশের ধারণা, শাহনুর হয়তো বাংলাদেশে পালিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রত্যাশিত ভাবেই অসমের জিহাদি-সংক্রান্ত মামলাগুলি এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল অসম সরকার। আজ মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেন। বৈঠকে ঠিক হয়, অপরাধের ধারা, জনবিন্যাস, নগরায়ণের সঙ্গে পাল্লা দিতে গুয়াহাটিতে পুলিশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হবে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গুয়াহাটি পুলিশ কমিশনারেটের অধীনে আসবে।