খাগড়াগড় কাণ্ডে চার্জশিট আজ, থাকছে ২২ নাম

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনাই শুধু নয়, ভারতের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোটাই নড়বড়ে করে দেওয়ার ছক ছিল জঙ্গিদের। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে এমনই জানা গিয়েছে বলে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র একটি সূত্রের দাবি। বিস্ফোরণের সূত্রে হদিশ মেলা ওই জঙ্গি চক্রের ১৮ জন ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে। যদিও ৪-৫ জন মাথা-সহ জনা ১৫ এখনও অধরা। এই অবস্থায় আজ, শুক্রবার খাগড়াগড় মামলায় কলকাতা নগর দায়রা আদালতে চার্জশিট দেওয়ার কথা এনআইএ-র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৩
Share:

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনাই শুধু নয়, ভারতের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোটাই নড়বড়ে করে দেওয়ার ছক ছিল জঙ্গিদের। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে এমনই জানা গিয়েছে বলে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র একটি সূত্রের দাবি। বিস্ফোরণের সূত্রে হদিশ মেলা ওই জঙ্গি চক্রের ১৮ জন ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে। যদিও ৪-৫ জন মাথা-সহ জনা ১৫ এখনও অধরা। এই অবস্থায় আজ, শুক্রবার খাগড়াগড় মামলায় কলকাতা নগর দায়রা আদালতে চার্জশিট দেওয়ার কথা এনআইএ-র।

Advertisement

এনআইএ সূত্রের খবর, প্রায় ৮০ পাতার ওই চার্জশিটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন বা ইউএপিএ-র পাশাপাশি দেশদ্রোহ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উদ্দেশ্যে অস্ত্র মজুত করার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক উপাদান আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ আনা হচ্ছে বলে এনআইএ সূত্রের খবর। তদন্তকারীদের একাংশ জানান, ২২ জনের নামে চার্জ আনা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ধরা পড়েছে দুই মহিলা-সহ ১৮ জন। পশ্চিমবঙ্গে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর প্রথম চাঁই হাতকাটা নাসিরুল্লা ওরফে সুহেল এবং তার দুই সহযোগী তথা আরও দুই বাংলাদেশি কওসর ওরফে বোমারু মিজান ও তালহা শেখ। এ ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের মধ্যে বর্ধমানের ইউসুফ শেখ, বীরভূমের কদর গাজিরা জড়িত থাকলেও পলাতক। তদন্তকারীরা জানান, ধৃত ও পলাতক কয়েক জনের নাম চার্জশিটে থাকছে।

খাগড়াগড় কাণ্ডের অভিযুক্ত হিসেবেই হায়দরাবাদ থেকে গ্রেফতার হয়েছিল মায়ানমারের নাগরিক খালিদ মহম্মদ। তার নাম এই চার্জশিটে থাকছে না বলে এনআইএ-র খবর। খালিদের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদে আলাদা এফআইআর করা হয়েছিল, তেমনই তার চার্জশিটও আলাদা ভাবে পেশ করা হবে। তবে বাংলাদেশের নাগরিক তথা ‘জেএমবি-র বর্ধমান মডিউলের চাঁই’ সাজিদের নাম এই চার্জশিটেই থাকছে। তবে এনআইএ-র একটি সূত্র জানাচ্ছে, একেবারে প্রধমে ধৃত দুই মহিলা আলিমা ও রাজিয়া বিবির নাম চার্জশিটে না-ও রাখা হতে পারে।

Advertisement

গত বছরের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি বাড়ির দোতলায় বিস্ফোরণে দু’জন নিহত হয়। সেই ঘটনার সূত্রেই তদন্ত চালাচ্ছে এনআইএ। বিস্ফোরণের কিছু পরেই এনআইএ-র একটি দল উপযাচক হয়ে ঘটনাস্থলে যায় রাজ্য পুলিশকে সাহায্য করার জন্য। কিন্তু ঘটনাস্থলে ঢুকতে তাদের বাধা দেওয়া ও বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ঘটনার সাত দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এক রকম নজিরবিহীন ভাবে রাজ্যের হাত থেকে কেড়ে এনআইএ-কে তদন্তভার দেয়। এনআইএ গত ১০ অক্টোবর দিল্লিতে এফআইআর করে আর ১২ অক্টোবর সরকারি ভাবে তদন্তভার নেয়।

তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে এনআইএ জেনেছিল, বাংলাদেশের নানা জায়গায় নাশকতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গের কিছু জায়গায় ডেরা বেঁধে কয়েক হাজার দেশি গ্রেনেড ও সকেট বোমা তৈরি করেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু গোয়েন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, তদন্ত এগোতে বোঝা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, অসম-সহ ভারতের কয়েকটি জায়গায় নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপর আঘাত হানার অভিসন্ধিও ছিল। তাই মকিমনগর ও শিমুলিয়া মাদ্রাসার মতো জায়গায় জেহাদ প্রশিক্ষণ ও মগজ ধোলাইয়ের বন্দোবস্ত এবং পর পর বহু পুরুষ ও মহিলা নিয়োগ করা হয়েছিল।

এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ইউএপিএ-র ক্ষেত্রে ১৮০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে হয়। তার কয়েক দিন আগেই এটা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, “চার্জশিট দেওয়ার পরেও এখনও বহু কাজ বাকি। কয়েক জন অধরা চাঁইকে ধরতে হবে আর সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে তৈরি বোমা ও গ্রেনেড এখনও এ দেশে রয়েছে কি না, সেটাও খুঁজে বার করতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন