১৬ অগস্টের স্মৃতি আজও ভোলেনি ধনঞ্জয়ের পরিবার

৩৫ বছর আগের ১৬ অগস্টের রাতটা এখনও ভুলতে পারেনি ডোমজুড়ের উত্তর ঝাঁপড়দহের মাঝের পাড়া। ওই কালো দিনেই ফুটবল দেখতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁদের পাড়ার ছেলে ধনঞ্জয় দাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমজুড় শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০১:১৩
Share:

৩৫ বছর আগের ১৬ অগস্টের রাতটা এখনও ভুলতে পারেনি ডোমজুড়ের উত্তর ঝাঁপড়দহের মাঝের পাড়া। ওই কালো দিনেই ফুটবল দেখতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁদের পাড়ার ছেলে ধনঞ্জয় দাস।

Advertisement

১৯৮০ সালের ১৬ অগস্ট। কলকাতার অগস্ট ইডেন গার্ডেনসে মুখোমুখি হয়েছিল মোহনবাগান ও ইষ্ট বেঙ্গল। মাঠের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে কানায় কানায় ভরা গ্যালারিতে। পদপিষ্ট হয়ে মারা যান ১৩ জন ফুটবলপ্রেমী। মৃতদের মধ্যে ছিলেন হাওড়ার ডোমজুড়ের ধনঞ্জয় দাস। এত বছর পরেও সেই দিনের কথা বলতে গিয়ে শিউড়ে ওঠে তাঁদের পরিবার।

মোহনবাগান অন্ত প্রাণ ধনঞ্জয়বাবু প্রিয় দলের খেলা থাকলেই মাঠে চলে যেতেন। বেশির ভাগ সময়েই পরিবারের সদস্যদের সে কথা জানাতেন না। ১৯৮০ সালের ১৬ অগস্টের সকালেও বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তিনি বলেননি যে ইডেন গার্ডেনসে খেলা দেখতে যাচ্ছেন। ধনঞ্জয়বাবুর বড় ছেলে স্বপন দাস বলেন, ‘‘আমাদের গাড়ির ব্যবসা ছিল। বাবা মাঝে মধ্যেই ব্যবসার কাজে বেরোচ্ছি বলে মোহনবাগানের খেলা দেখতে চলে যেত। আমরা জানতেও পারতাম না।’’ তিনি জানান, তাঁর দাদা কর্মসূত্রে মুম্বইয়ের বাসিন্দা। বাবা এক বার হঠাৎ করেই দাদার জন্য মন খারাপ করছে বলে মুম্বই চলে যান। পরে জানা যায় ধনঞ্জয়বাবুর মুম্বই যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল রোর্ভাস কাপের খেলা দেখা।

Advertisement

কী হয়েছিল ১৬ অগস্ট? স্বপনবাবু জানান, তাঁর বাবা যে খেলা দেখতে গিয়েছেন সেটা তাঁরা জানতেন না। রাত ৮টা নাগাদ মাঠে অশান্তির খবর পান তাঁরা। তার পর পাড়ার কয়েক জন তাঁকে আড়ালে ডেকে জানান, ধনঞ্জয়বাবু খেলা দেখতে গিয়েছেন। এই খবর পাওয়ার পরেই বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন স্বপনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘তখন আমার মাত্র কুড়ি বছর বয়স। বাড়িতে মা, ঠাকুমা রয়েছেন। দাদা মুম্বইতে। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। রাত ১১টা নাগাদ আমাদের এক কর্মচারী এসে জানান, বাবার সঙ্গে যাঁরা খেলা দেখতে গিয়েছিলেন তাঁরা ফিরে এসেছেন। এর পর আমি দাশনগরে আমার দিদির শ্বশুরবাড়ি চলে যাই। কয়েক জন রওনা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। তার পর খবর আসে গ্যালারিতে পদপিষ্ট হয়ে বাবার মৃত্যু হয়েছে।’’

ধনঞ্জয়বাবুর মৃত্যুর পরে প্রাথমিক ভাবে ভেঙে পড়লেও তাঁকে স্মরণ করতে মাঠকেই বেছে নিয়েছে তাঁর পরিবার। প্রতি এক বছর অন্তর শীতকালে স্থানীয় প্রাচ্যভারতী স্টেডিয়ামে ধনঞ্জয়বাবুর নামে ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে স্থানীয় বিল্পবী সঙ্ঘ।

মাঠ কেড়ে নিয়েছে প্রিয়জনকে। কিন্তু অভিমানে মাঠ থেকে সরে গিয়ে নয়, প্রিয়জনকে তাঁরা খুঁজে পান সেই ফুটবলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন