নাটকীয় যুদ্ধ অবশেষে সমাপ্তির পথে। এবং অনেকেরই দাবি, তার পিছনে প্রধান ভূমিকা রয়েছে কালীঘাটের বকুনির।
চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখার সভাপতি পদের জন্য কে কে লড়বেন, তা নিয়ে লড়াই চলছিল প্রায় তিন মাস ধরে। বলা হয়, এখানে সভাপতি হওয়া মানেই রাজ্যের চিকিৎসক মহলে অলিখিত নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব স্থাপন।
ময়দানে আস্তিন গুটিয়ে নেমেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের দুই চিকিৎসক-নেতা। নির্মল মাজি ও শান্তনু সেন। ব্যালট পেপার সংগ্রহ হয়ে গেলেও থমকে ছিল গোনাগুনি। কারণ দু’পক্ষই মরিয়া। কখনও এক পক্ষ এগিয়ে যাচ্ছিল আইনি লড়াইয়ে, পরের দানে সে-ই আবার মাত হয়ে যাচ্ছিল অন্য পক্ষের চালে। আগামী এক মাসের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া থেমে গিয়েছিল আদালতের নির্দেশে।
কিন্তু আচমকাই নির্মল মাজির শান্তিপ্রস্তাব! তাতে শান্তনু শিবির প্রথমে থতমত, পরে অবশ্য বিজয়ীর হাসিতে উজ্জ্বল। যুদ্ধ নয়, শান্তি চেয়েছেন নির্মল। জানিয়েছেন, তাঁরা আর আইনি লড়াই লড়তে চান না। সমস্যা মিটিয়ে নিতে চান আদালতের বাইরে। যার নির্যাস, আইএমএ নির্বাচনেও লড়ছেন না তিনি। শুক্রবার এই মর্মেই আলিপুর জেলা আদালতে সই করে আবেদন জমা দিয়েছেন নির্মল ও তাঁর দুই চিকিৎসক-সঙ্গী প্রদীপ নিমানি ও অসীম সরকার। আইএমএ-র তরফে আইনজীবী কৌশিক চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘নির্মলবাবুরা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, তাঁরা আর লড়তে চান না। বিষয়টা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নিতে চান।’’ যদিও নির্মল মাজির পক্ষের আইনজীবী অতীন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি ঝাঁঝিয়ে উঠে বলেন, ‘‘আপনাদের কি দাসখত দিয়েছি যে কথা বলতে হবে? কিচ্ছু বলব না।’’
এ হেন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইলে নির্মল ফোনে বলেছেন, ‘‘ও কিছুই না। সব ভাব-ভাব ডাব-ডাব হয়ে গিয়েছে। সব ভাল যার শেষ ভাল। আর কিছু বলব না। আপনারা উল্টো মানে করবেন।’’ আর শান্তনুর বক্তব্য, ‘‘আমি এই কেসের কেউ না-হলেও এটা মিটে যাক, অনেক দিন ধরে চাইছিলাম। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে।’’
আইএমএ সূত্রের খবর, ইচ্ছাকৃত ভাবে শান্তনু গোষ্ঠী তাঁকে ভোটে দাঁড়াতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছিলেন নির্মল মাজি। আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ মুহূর্তে বাতিল করে আবার নতুন করে করা যায়। এবং সেখানে তিনি নিজে প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। গত সপ্তাহ পর্যন্ত তিনি চোয়াল শক্ত করে আইনি লড়াইয়ে ছিলেন। তা হলে রাতারাতি পিছু হটলেন কেন? রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি সকালে কালীঘাটের বাড়িতে ডাক পড়েছিল নির্মলের। সেখানেই কড়া ভাষায় তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, আইএমএ-র রাজ্য শাখার নির্বাচন নিয়ে দলীয় সতীর্থদের সঙ্গে লড়াই বন্ধ করতে হবে। তা না হলে সরকারি হাসপাতালগুলিতে তাঁর বদলে তৃণমূলের অপর এক বিধায়ককে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। আর তার পরেই হাওয়া-বদল।
যদিও নির্মল এবং তাঁর সঙ্গীরা এই যুক্তি মানতে চাননি। প্রদীপ নিমানি বলেছেন, ‘‘আমরা এক নৌকায় সওয়ার। একসঙ্গে ছিলাম। মাঝখানে একটু গোলমাল হয়েছিল, সব মিটিয়ে নিয়েছি।’’ হঠাৎ এমন নরম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিরক্তির সুরে বলেছেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের লোকের আগ্রহের দরকার নেই।’’ অসীম সরকার তো প্রথমে বিষয়টা স্বীকারই করতে চাননি।
তার পর আদালতের কাগজে তাঁর সইয়ের কথা জানাতে একটু থমকে বলেন, ‘‘মন্তব্য করব না। যা বলার নির্মল মাজি বলবেন।’’