আইএমএ ভোটে কেটে গেল বাধা, বেকায়দায় নির্মল

বিধানসভার ভোটের সময় থেকেই শাসক দলে তিনি বেশ খানিকটা কোণঠাসা। এ বার আইএমএ ‘দখল’-এর লড়াইয়েও এক কদম পিছিয়ে পড়লেন তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা নির্মল মাজি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৪
Share:

বিধানসভার ভোটের সময় থেকেই শাসক দলে তিনি বেশ খানিকটা কোণঠাসা। এ বার আইএমএ ‘দখল’-এর লড়াইয়েও এক কদম পিছিয়ে পড়লেন তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা নির্মল মাজি।

Advertisement

চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ বা আইএমএ-র নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ম মেনে হয়নি বলে আলিপুর দ্বিতীয় মুনসেফি দেওয়ানি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নির্মল মাজি, প্রদীপকুমার নিমানি ও অসীমকুমার সরকার। প্রথমে ওই নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল আদালত। কিন্তু সোমবার তারা সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অর্থাৎ ওই ভোটে আর কোনও বাধা থাকছে না।

কয়েক বছর আগে আইএমএ-র রাজ্য শাখার সভাপতি ছিলেন নির্মল মাজি। এবং সভাপতি থাকাকালীনই পদাধিকার-বলে আধিপত্য বিস্তার করেন। এতটাই যে, সব মেডিক্যাল কলেজে তিনিই কার্যত দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে উঠেছিলেন বলে চিকিৎসক মহলের খবর। কিন্তু আইএমএ-র নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি-পদে পরপর দাঁড়ানো যায় না। তাই কিছু দিন তিনি আর ভোটে দাঁড়াতে পারেনি।

Advertisement

আবার ভোট আসতেই আইএমএ দখল নিয়ে নির্মলের সঙ্গে লড়াই শুরু হয় তৃণমূলেরই আর এক চিকিৎসক-নেতা শান্তনু সেনের। আইএমএ-র রাজ্য শাখার সভাপতি-পদে ভোটে দাঁড়াতে মরিয়া নির্মল। কারণ তাঁর ধারণা, ওই পদে না-থাকলে চিকিৎসকদের উপরে তাঁর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। উল্টো দিকে চিকিৎসক মহলের উপরে নিজের প্রভাব বজায় রাখতে মরিয়া বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্তনুও। সভাপতি-সহ বিভিন্ন পদে তাই লড়াইয়ে নামেন শান্তনু-ঘনিষ্ঠেরা।

এই অবস্থায় নির্মলের ভোটে দাঁড়ানোর আবেদনপত্র নাকচ করে দেয় আইএমএ-র নির্বাচন কমিশন। অভিযোগ, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে নির্মল আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। এর জেরেই দুই নেতার লড়াই চরমে ওঠে। নির্মলপন্থীদের অভিযোগ, তাঁদের নেতা যাতে ভোটে দাঁড়াতে না-পারেন, সেই জন্যই শান্তনু এবং তাঁর দলবল সংগঠনের নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করে নির্মলের আবেদন বাতিল করিয়ে দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে দলীয় দুই নেতার কোন্দল থামাতে ময়দানে নামেন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়। তিনি তৃণমূল ভবনে দু’জনকে নিয়ে বৈঠকও করেন। কিন্তু তাতেও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। ১ ডিসেম্বর চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যালট পেপার বিলিও শুরু হয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সব ব্যালট ফেরত আসার কথা। তার আগেই, ১৪ ডিসেম্বর আদালতের শরণাপন্ন হন নির্মল। আদালত ভোট প্রক্রিয়ার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে। এ দিনের রায়ে সেই স্থগিতাদেশ ওঠার পরে শান্তুনু বলেন, ‘‘সত্যের জয় হল। প্রমাণিত হল, নির্মল মাজি সময়মতো আবেদন জমা দেননি। তাই তাঁর ভোটে লড়াই করাটা বৈধ নয়।’’ নির্মল পাল্টা জানিয়ে দিয়েছেন, নিম্ন আদালতের রায়ই সব নয়। তিনি এ বার উচ্চতর আদালতে যাবেন।আইএমএ-র নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী কৌশিক চট্টোপাধ্যায় জানান, সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায় ঘেঁটে দেখার পরে আদালত জানিয়েছে, কোনও নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে তা মাঝপথে থামানো অনুচিত। আদালত আরও জানিয়েছে, আইএমএ-র নির্বাচন তাদের এক্তিয়ারে পড়ছে না। নির্মল মাজি অবশ্য বলেছেন, ‘‘লড়াই থামবে না। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে যাব।’’

কলেজে কলেজে ছাত্রভোটে সংঘর্ষ চলছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে। চিকিৎসক সংগঠনের ভোটেও শাসক দলেরই নেতাদের দ্বৈরথ কোথায় দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন