হাইকোর্টকে দুষে নিজেই প্যাঁচে রাজ্য

নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারা একেই বলে! সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের রণকৌশল দেখে এমনই মনে করছেন শীর্ষ আদালতের আইনজীবীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭ ০৩:২২
Share:

নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারা একেই বলে! সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের রণকৌশল দেখে এমনই মনে করছেন শীর্ষ আদালতের আইনজীবীরা।

Advertisement

শুধু তাঁরাই নন। আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তৃণমূলের সাংসদ-মন্ত্রীরাও রাজ্য সরকারের আইনজীবীদের দুষেছেন। কারণ রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলের নেতারা একই লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হলেও ফুটে উঠেছে সমন্বয়ের অভাব।

নারদ মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করার জন্য একটা বিশেষ কৌশল নিয়েছিল নবান্ন। আইন দফতরের এক কর্তার অভিযোগ, এক সরকারি আইনজীবীর ভুল পদক্ষেপের জন্য তা কার্যকর করা যায়নি।

Advertisement

নবান্নের খবর, কৌশল হিসাবে মঙ্গলবার অভিযুক্তদের আইনজীবীরাই সওয়াল করবেন বলে ঠিক ছিল। একান্ত প্রয়োজন হলে সরকারের আইনজীবী শেষবেলায় মাঠে নামবেন। এই মামলায় সরকার আলাদা পক্ষ হলেও তাদের লিখিত বক্তব্য সর্বোচ্চ আদালতে জমা দিতে হয়েছিল। এবং নিয়ম মতো তা মামলার সব পক্ষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল।

মঙ্গলবার শুনানি শুরু হওয়ার পরে পরিকল্পনা মতো শুভেন্দু অধিকারী, সৌগত রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়দের আইনজীবীরা সওয়াল শুরু করেন। রাজ্যের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড পারিজাত সিনহা তখন নিজের ঘরে বসে। এজলাসেও যাননি। প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা জানান, দেড় ঘণ্টা সওয়াল জবাবে বার বার প্রধান বিচারপতি জগদীশ সিংহ খেহরের ডিভিশন বেঞ্চের করা নানা প্রশ্নে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছিল নারদ-অভিযুক্তদের আইনজীবীদের।

এমন সময় হঠাৎই রাজ্যের পক্ষের এক আইনজীবী মৃণাল মণ্ডল উঠে দাঁড়িয়ে সওয়াল করতে শুরু করেন। আর তখনই নারদের মূল মামলাকারী ব্রজেশ ঝা-র আইনজীবী হরিশ সালভে উঠে দাঁড়িয়ে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর আবেদনের একটা অংশ পড়ে শোনান, যাতে বলা হয়েছে— ‘হাইকোর্টের বিচারপতি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে রায় দিয়েছেন’।

এটা শুনেই ক্ষুব্ধ হন প্রধান বিচারপতি খেহর। সরকারের আবেদনে কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে এমন মন্তব্য কী ভাবে থাকে, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি রাজ্যের আইনজীবীকে ক্ষমা চাইতে বলেন। ওই আইনজীবী সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নেন। একই সঙ্গে সরকারি আইনজীবী মৃণাল মণ্ডল জানিয়ে দেন, তাঁরা রাজ্য সরকারের তরফের আবেদন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। যা নিয়ে পরে তৃণমূলের আইনজীবীরাও প্রশ্ন তোলেন, এটা রাজ্যের আইনজীবীরা কী করলেন? এতে তো রাজ্যের মুখ পুড়ল। মামলাও দুর্বল হয়ে গেল। সিবিআইয়ের বদলে কেন রাজ্য পুলিশ তদন্ত করবে না, সেই যুক্তিও রাজ্য পুলিশের কার্যকলাপের জেরে খারিজ হয়ে যায়। কারণ ভিডিও প্রকাশের পরে পুলিশ কোনও পদক্ষেপই করেনি। হাইকোর্টে মামলা হওয়ার পরে তারা ম্যাথুর উদ্দেশ্য নিয়েই তদন্ত শুরু করে।

আইন দফতর মনে করছে, কৌশল মতো এ দিন সরকারি আইনজীবী আগ বাড়িয়ে সওয়াল না করলে কোনও সমস্যা হতো না। রাজ্য প্রয়োজনে পৃথক মামলা করার সুযোগও পেত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড পারিজাত সিনহা এবং তাঁর সহযোগীদের ভুলের জন্য তা হল না।

এর পরেই তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় নবান্ন। শীঘ্রই দিল্লিতে নতুন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড নিয়োগ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন