হিম-হাওয়ার দেখা নেই, দূষণে দাপট কুয়াশার

পঞ্জিকার বিচারে সময়টা হেমন্ত ঠিকই। কিন্তু হিমেল হাওয়ার দেখা নেই এখনও। তবে ভোরের কুয়াশা যথারীতি হাজির! এতটাই যে, শুক্রবার ভোরে দৃশ্যমানতা ২০০ মিটারেরও নীচে নেমে যায় এবং তার জেরে কলকাতায় নামতে না-পেরে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায় দু’টি বিমান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৫
Share:

পঞ্জিকার বিচারে সময়টা হেমন্ত ঠিকই। কিন্তু হিমেল হাওয়ার দেখা নেই এখনও। তবে ভোরের কুয়াশা যথারীতি হাজির! এতটাই যে, শুক্রবার ভোরে দৃশ্যমানতা ২০০ মিটারেরও নীচে নেমে যায় এবং তার জেরে কলকাতায় নামতে না-পেরে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায় দু’টি বিমান।

Advertisement

সকালে তখন সবে ঘুম ভাঙছে মহানগরের। প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে এক প্রৌঢ় দেখলেন, হাওয়ায় জড়িয়ে রয়েছে কুয়াশার চাদর। শহর ছাড়িয়ে শহরতলিতে পা দিলেই অবশ্য কুয়াশার চাদর বদলে যাচ্ছে ধোঁয়াশার আলখাল্লায়। সব মিলিয়ে যেন শীতের আগমনির সুর আবহাওয়ায়।

আগমনি, কিন্তু শীত তো নয়। তা হলে আগেভাগে এমন কুয়াশা কেন?

Advertisement

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের ব্যাখ্যা, বর্ষা বিদায় নিলেও বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা যথেষ্টই বেশি। গভীর রাতের দিকে তাপমাত্রা ঝুপ করে নেমে যাওয়ায় জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কুয়াশা তৈরি করছে। বৃহস্পতিবার বিহার থেকে এ রাজ্যের উপরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা ছিল বলে জলীয় বাষ্প ছিল আরও বেশি পরিমাণে।

হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, শুধু কলকাতা নয়, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আরও কিছু এলাকা এবং বিহারের একাংশেও এ দিন সকালে কুয়াশা হয়েছে। সকালের দিকে মেঘও চোখে পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়।

পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, গাঢ় কুয়াশা ও ধোঁয়াশার পিছনে আছে বাতাসে মিশে থাকা ধুলো এবং দূষিত কণা। তাঁদের মতে, বাতাসে বেশি মাত্রায় ধুলো ও দূষিত কণা থাকলে তারা সহজে কুয়াশা কাটতে দেয় না। উল্টে চার পাশ আরও ঝাপসা করে দেয়। বিশেষত কার্বনের মতো রাসায়নিক থাকলে তা তাপ শোষণ করে এবং কুয়াশা কাটতে দেয় না।

এ বছর কালীপুজোয় বৃষ্টি হওয়ায় আতসবাজির দূষণ বাতাসে তেমন স্থায়ী হতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু বিভিন্ন জায়গার নির্মাণকাজ এবং গাড়ির ধোঁয়া থেকে প্রতিদিন যে-দূষণ ছড়াচ্ছে, তার ফলেই তৈরি হচ্ছে ধোঁয়াশা। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, বর্ষা বিদায়ের পরে বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। দু’দিনে বাতাসে গড় দূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি ছিল। পরিবেশবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, কল্যাণী ও ব্যারাকপুর এক্সপ্রেসওয়েতে কুয়াশা অনেক বেশি গাঢ়। ওই এলাকায় চলাচলকারী ট্রাকের দূষণ তার অন্যতম কারণ। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মেট্রোর নির্মাণকাজও অনেকটা দায়ী।

কুয়াশার দাপটে বৃহস্পতিবার মাঝরাত থেকে দৃশ্যমানতা আচমকাই কমে যায়। তখন অসুবিধা হলেও কলকাতা বিমানবন্দরে ‘ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম’ বা আইএলএস যন্ত্রের সুবিধা নিয়ে কয়েকটি বিমান নেমে আসতে পেরেছিল। শুক্রবার ভোরে দৃশ্যমানতা ২০০ মিটারেরও নীচে নেমে যাওয়ায় সমস্যা বাড়ে। এত কম দৃশ্যমানতায় কলকাতায় বিমান নামার সুবিধা নেই। নামতে না-পেরে বেঙ্গালুরু থেকে আসা ইন্ডিগোর বিমান চলে যায় রাঁচীতে। আর ভুবনেশ্বর চলে যেতে বাধ্য হয় গুয়াহাটি থেকে আসা ইন্ডিগোর বিমান। সকাল ৭টার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

এই কুয়াশা একটানা স্থায়ী হবে না বলেই মত আবহবিজ্ঞানীদের অনেকে। হাওয়া অফিসের একটি সূত্র বলছে, নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি দুর্বল হলেই জোলো হাওয়ার জোগান কমে যাবে। তখন এমন কুয়াশা না-ও হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন