বেনিয়মই যেখানে ‘বিধি’, সেখানে ধোঁয়া রুখবে কে

ধূমপান নিয়ে সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, মুম্বই পুলিশের প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মী তামাকে আসক্ত। এমনকী, তাঁদের ৩৫ শতাংশের মধ্যে ক্যানসারের পূর্বলক্ষণ স্পষ্ট। কলকাতায় অবশ্য এমন কোনও সমীক্ষার খবর নেই। হলে কী রিপোর্ট আসবে, তা সহজেই অনুমেয়।

Advertisement

সায়নী ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০২:৩২
Share:

ধূমপান নিয়ে সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, মুম্বই পুলিশের প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মী তামাকে আসক্ত। এমনকী, তাঁদের ৩৫ শতাংশের মধ্যে ক্যানসারের পূর্বলক্ষণ স্পষ্ট। কলকাতায় অবশ্য এমন কোনও সমীক্ষার খবর নেই। হলে কী রিপোর্ট আসবে, তা সহজেই অনুমেয়। কারণ, এখানে মন্ত্রী থেকে মেয়র, আমলা থেকে কনস্টেবল— তামাক বিষয়ে আইনি নিষেধাজ্ঞা বিশেষ মানতে দেখা যায় না কাউকেই। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তো রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে মহাকরণেই ধূমপান করতেন। এখনও কয়েক জন মন্ত্রী অফিসে নিজেদের ঘরে ধূমপান করেন। কোনও কোনও সচিবের কামরা কড়া চুরুটের গন্ধে ম-ম করে। পুরভবনেও সিগারেটের গন্ধ গোপন থাকে না। লালবাজার থেকে স্থানীয় থানা, কাজের ফাঁকে দু’মিনিটের সুখটান দিতে অভ্যস্ত অনেকেই। এঁদের উদাহরণ দিয়েই তামাক সেবনের অজুহাত খাড়া করার জোর পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যুক্তি, যাঁরা আইন মানাবেন, সেই রক্ষকেরাই তো ভক্ষক।

Advertisement

আবহমান কাল ধরে এ ভাবেই চলে আসছে। যাঁরা তামাক-বিরোধী সচেতনতা শিবিরে গালভরা বক্তৃতা দেন, তাঁরাই সভার শেষে সিগারেটের ধোঁয়া টানতে টানতে যে যার দফতরে ফিরে যান। তাঁরা আইন জানেন, তামাকের প্রভাব নিয়েও যথেষ্ট সচেতন। তা সত্ত্বেও হেলদোল নেই তাঁদের। যাঁরা নিজেরাই প্রকাশ্যে ধূমপান করেন বা তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন, তাঁরা কী ভাবে এই সমাজকে তামাকমুক্ত করতে সক্ষম হবেন, সেই প্রশ্ন উঠছে বার বার।

আজ, রবিবার তামাক-বিরোধী দিবস। তামাক মুক্ত পরিবেশের জন্য রাজ্য জুড়ে নানা অনুষ্ঠান-সেমিনার-মিছিল হওয়ার কথা। কিন্তু তাতে কি আদৌ কোনও কাজ হবে?

Advertisement

সংশয়ে খোদ লালবাজারের এক কর্তাও। তিনি বলেন, ‘‘আইন-কানুন থাকলেও এই বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দিয়ে কোথাওই মানা হয় না। ফলে বছরের পর বছর এই দিনটা আসে-যায়। কলকাতা থাকে কলকাতাতেই।’’ প্রতি বছর এই দিনে স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করে লালবাজার থেকে থানাগুলিতে চালান বই বিলি করা হয়। তবে তা বিশেষ ব্যবহার করা হয় না বলেই থানা সূত্রে খবর। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘একেই থানায় কাজের চাপ। তার উপরে কে কোথায় ধূমপান করছে, তা দেখে জরিমানা করা প্রায় অসম্ভব। ধূমপান তো সবাই করে। আইন থেকেও লাভ নেই।’’

মুম্বইয়ে সমীক্ষা হলেও স্বাস্থ্য ভবনে কলকাতা পুলিশ সংক্রান্ত এমন কোনও নেই। স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে শনিবার বলেন, ‘‘এমন কোনও সমীক্ষা হয়েছে কি না, মনে পড়ছে না।’’ লালবাজার-কর্তাদের কাছ থেকেও এ নিয়ে তথ্য মেলেনি। শুধু পুলিশই নয়, নেতা-মন্ত্রী বা সরকারি দফতর— কোথাওই এ নিয়ে কোনও সমীক্ষা সাম্প্রতিক অতীতে হয়নি বলেই স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।

তা হলে তামাক নিষিদ্ধ নিশ্চিত করার দায়িত্ব কার? স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক পুলিশের কাঁধে দায় ভার ঠেলে দেন। আর লালবাজারের এক কর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি আইনের বই খুলে শুনিয়ে দেন, শুধু পুলিশই নয়, আইনের অন্যথা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে সরকারি অফিসারদেরও। কিন্তু এ দায় কেউ নিজের কাঁধে নিতে রাজি নন।

আজ আরও এক তামাক-বিরোধী দিবস। তবে, পরিস্থিতি সেই একই। চিকিৎসকদের নিদান, সচেতন হোক সবাই। তবে, তামাকমুক্ত বিশ্বের জন্য পথ গড়তে হবে আইনকেই।

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার ও দেবাশিস রায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন