কিষান বাজারে খদ্দের নেই, ক্ষুব্ধ কৃষকরা পথে

চাষিদের সব্জি বেচাকেনার সুবিধার জন্য ঝাড়গ্রাম শহরের কাছে জামদায় তৈরি হয়েছে কিষান মান্ডি। এই বাজারে পাইকারি বিকিকিনির সময় কাকভোর। কিন্তু ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে চার কিলোমিটার দূরের ওই এলাকায় সেই সময় যাতায়াত সমস্যার।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০২:৪৪
Share:

চাষিদের সব্জি বেচাকেনার সুবিধার জন্য ঝাড়গ্রাম শহরের কাছে জামদায় তৈরি হয়েছে কিষান মান্ডি। এই বাজারে পাইকারি বিকিকিনির সময় কাকভোর। কিন্তু ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে চার কিলোমিটার দূরের ওই এলাকায় সেই সময় যাতায়াত সমস্যার। বৃহস্পতিবার তাই জঙ্গলমহলের প্রায় দু’হাজার চাষি সব্জি নিয়ে এলেও বেচাকেনা হল না। কারণ, পাইকাররা কেউ আসেননি। প্রতিবাদে পথে নামলেন চাষিরা। সকাল সাতটা থেকে তিন ঘণ্টা ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজ্য সড়ক অবরোধ করে চলল বিক্ষোভ।

Advertisement

এই কিষান বাজারের উদ্বোধন হয় ২০১৪ সালে। কিন্তু বেচাকেনা জমেনি। মাঝে একবার সরকারি ভাবে ধান কেনার শিবির হয়েছিল এখানে। তার পর গত ৭ অগস্ট বাজার চালুর কথা ছিল। কিন্তু ক্ষতির কথা ভেবে চাষিরা কেউ যাননি। এর পর একরকম জোর করেই চাষিদের জামদায় পাঠাতে উঠেপড়ে লাগে কৃষি বিপণন দফতর। ওই বাজারে সব্জি না বেচলে আড়তদার ও চাষিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কথাও বলা হয়। চাপে পড়েই এ দিন হাজার দু’য়েক চাষি প্রায় ১২০ কুইন্ট্যাল সব্জি নিয়ে হাজির হন জামদার কিষান বাজারে। আসেন ঝাড়গ্রামের ৩০ জন আড়তদাররাও। কিন্তু একজনও পাইকার আসেননি। চাঁদড়ার চাষি মিন্টু দলুইয়ের ক্ষোভ, ‘‘ভোররাত থেকে বসে। কিচ্ছু বিক্রি হয়নি। তাই আমরা অবরোধ করেছি।’’

চাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই প্রতি ব্লকে কিষান বাজার তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের প্রকল্প এটি। জেলায় জেলায় কিষান মান্ডি তৈরির পরে অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠতে শুরু করে, বাজারের জন্য এমন জায়গা বাছা হয়েছে যেখানে যাতায়াত সমস্যা। মেদিনীপুর সদর ব্লক আর কেশপুরের কিষান বাজার যেমন সদর শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। পাঁশকুড়াতেও স্টেশন আর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাজার দু’ কিলোমিটার দূরে। জামদাতেও সমস্যা সেই যাতায়াত। রৌরকেলার সারথিরানি কৈর্বত্য, গালুডির বিনতা সিংহের মতো পাইকারদের কথায়, ‘‘ভোররাতের ট্রেনে আসি। অত দূরে বাজারে যাতায়াত করে সব্জি আনা-নেওয়া সম্ভব নয়।”

Advertisement

তবে সর্বত্র যাতায়াতের সমস্যার কথা মানছেন না রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘এ দিনই তো পটাশপুরে কিষান মান্ডির উদ্বোধন করলাম। একদম স্টেশনের কাছে। কোনও অসুবিধা নেই।’’ জামদা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘পরিকাঠামো নিয়ে সমস্যা থাকলে নিশ্চয়ই দেখা হবে। তবে যেখানে বাজার তৈরি হয়েছে, সেখানে সবাইকে যেতেও হবে।’’ ঝাড়গ্রাম মহকুমার সহ-কৃষিজ বিপণন অধিকর্তা (প্রশাসন) অঞ্জন ঘোষালের আবার যুক্তি, ‘‘যেখানে সরকারি জায়গা সহজে পাওয়া গিয়েছে, সেখানেই বাজার তৈরি হয়েছে।”

বিক্ষোভ সামলাতে প্রশাসনিক কর্তারা এ দিন চাষিদের বলেন, ঝাড়গ্রাম স্টেশনের কাছে আগে যেখানে পাইকারি কেনাবেচা চলত, সেখানেই আপাতত বাজার চলবে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে স্টেশন লাগোয়া ওই বাজার চলছে। হাতের নাগালে ট্রেন থাকায় ঝাড়খণ্ড-ওড়িশার পাইকাররা সহজেই সব্জি কিনে নিয়ে যেতে পারেন। তবে সরকারি কিষান মান্ডিটি জামদাতেই চালানোর সিদ্ধান্তে অনড় প্রশাসন। ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “কিষান বাজারের পরিকাঠামো যখন তৈরি হয়েছে তখন সেটি ব্যবহার করতেই হবে। সমস্যা মেটাতে সব পক্ষকে নিয়ে শীঘ্রই বৈঠক হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement