অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়ম বরদাস্ত করব না: পার্থ

রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগে বিধিভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতর তদন্ত শুরু করেছে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেই বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ বাছাই বা নিয়োগে কোনও অনিয়ম বরদাস্ত করব না।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২১
Share:

রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগে বিধিভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতর তদন্ত শুরু করেছে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেই বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ বাছাই বা নিয়োগে কোনও অনিয়ম বরদাস্ত করব না।’’

Advertisement

রাজ্যের ৪৫টি সরকারি কলেজের মধ্যে ৪১টিতেই স্থায়ী অধ্যক্ষের পদ শূন্য। সেই সব পদ পূরণে গড়িমসির অভিযোগের মুখে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) সম্প্রতি স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে আট জনকে নির্বাচন করে তাঁদের নাম নিজেদের ওয়েবসাইটে দিয়েও দেয় পিএসসি। কিন্তু সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির অভিযোগ, ওই আট জনেরই মনোনয়নে অনিয়ম হয়েছে। তাঁদের নির্বাচন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র বেঁধে দেওয়া যোগ্যতামানের তোয়াক্কা না-করেই। বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলে তাঁদের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছিল শিক্ষক সমিতি। তার ভিত্তিতেই এ দিন তদন্তের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী। তবে পিএসসি-র দাবি, আট প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়েছে বিধি মেনেই।

অধ্যক্ষ বাছাই প্রক্রিয়ার ঠিক কোন পর্যায়ে অনিয়ম হয়েছে, পরিষ্কার ভাবে তা তুলে ধরেছে শিক্ষক সমিতি। তারা জানায়, সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে আবশ্যিক যোগ্যতামান চারটি। তারই একটিকে বেমালুম তুড়ি মেরে আট জন প্রার্থীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেই মাপকাঠির নাম ‘আকাদেমিক পারফরমেন্স ইন্ডিকেটর’ বা এপিআই। ইউজিসি-র নির্দেশ: এই ইন্ডিকেটরে গবেষণা সংক্রান্ত মোট পাঁচটি বিষয় মিলিয়ে ন্যূনতম ৪০০ নম্বর পেলে তবেই অধ্যক্ষ-পদে কোনও প্রার্থীর আবেদন বিবেচনার যোগ্য হয়ে উঠবে। শিক্ষক সমিতির অভিযোগ, পিএসসি যে-আট জনকে মনোনীত করেছে, তাঁদের কেউই ওই যোগ্যতামান পেরোতে পারেননি। তাই এই ‘নিয়ম-বহির্ভূত’ মনোনয়ন বাতিল করা এবং নতুন বিজ্ঞপ্তি জারির দাবি জানিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরকে চিঠি দেয় সমিতি।

Advertisement

কমিশনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আগেই তাঁর কানে পৌঁছেছিল বলে এ দিন দাবি করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষা দফতর ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। কমিশনের কাছে যাবতীয় কাগজপত্রও চেয়ে পাঠানো হয়েছে।’’

যাবতীয় নথিপত্র পেশ করতে গিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে খুবই সমস্যায় পড়তে হবে বলে মনে করছেন সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি দেবাশিস সরকার। তিনি জানান, নথিপত্র পেশ করতে হলে প্রথমেই দু’টি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে কমিশনকে।

• কবে আবেদনকারীদের কাছে ওই এপিআইয়ের নথি চাওয়া হয়েছিল? শিক্ষক সমিতি জানাচ্ছে, অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরে তড়িঘড়ি নির্বাচিতদের ফোন করে ওই নথি পেশ করতে বলে পিএসসি। অথচ নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারভিউয়ে যাবতীয় নথি পেশ করার কথা। আদতে তা হয়নি।

• এপিআই নির্ধারণের নিয়ম অনুযায়ী পাঁচটি বিষয় মিলিয়ে ৪০০ নম্বর তুলতেই হবে। সেই নম্বর না-থাকা সত্ত্বেও ওই আট জনকে নির্বাচন করা হল কী ভাবে? সমিতির বক্তব্য, ন্যূনতম নম্বর না-থাকলে তো সাক্ষাৎকার পর্বেই আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। তা না-করে নিয়োগের জন্য ওই আট জনের নাম ওয়েবসাইটে দেওয়া হল কেন?

পিএসসি কাগজপত্র জমা দিতে গেলেই এই সব প্রশ্নের মুখে পড়বে বলে মনে করছে শিক্ষক সিমিতি। কিন্তু কমিশন ঠিক কবে উচ্চশিক্ষা দফতরে ওই সব নথি পেশ করবে, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তদন্তের কথা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে পার্থবাবুর মন্তব্য, যাঁরা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন, সেই সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিচয় আছে। তাই এমন অভিযোগ তোলাটা তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যেই পড়ে। তার পরেই শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেন, অনিয়ম হয়ে থাকলে সরকার কোনও ভাবেই তা বরদাস্ত করবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন