Habeas corpus

অপরাধের আশঙ্কায় ‘আগাম আটক’ নয়: হাই কোর্ট, ঝাড়খণ্ডে বন্দি রাজ্যের বাসিন্দাকে মুক্তি দিন, নির্দেশ কেন্দ্রীয় সংস্থাকে

অপরাধ আশঙ্কায় কাউকে ‘আগাম আটক’ করা যায় না। যদি না খুব বড় প্রমাণ থাকে! ‘আগাম আটক’ সাধারণ মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। হিবিয়াস কর্পাস মামলায় সোমবার এই পর্যবেক্ষণই রাখল কলকাতা হাই কোর্ট।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ২০:৫৭
Share:

ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

অপরাধ ঘটাতে পারেন, এই আশঙ্কায় কাউকে ‘আগাম আটক’ করা যায় না। যদি না খুব বড় প্রমাণ থাকে! ‘আগাম আটক’ সাধারণ মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। হেবিয়াস কর্পাস মামলায় সোমবার এই পর্যবেক্ষণই রাখল কলকাতা হাই কোর্ট।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের বাসিন্দা জাহানারা বিবি এবং তাঁর ছেলেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রের ‘নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো’ (এনসিবি)। মাদক পাচারে অভিযুক্ত এবং জামিনে মুক্ত জাহানারা ও তাঁর ছেলে আবার অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়তে পারেন, এই সন্দেহের বশে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁদের রাখা হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের জেলে। এই গ্রেফতারির বিরুদ্ধে হাই কোর্টে হিবিয়াস কর্পাস মামলা হয়।

সোমবার সেই মামলায় উচ্চ আদালতের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের বেঞ্চ জাহানারা এবং তাঁর ছেলেকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিল। আদালতে জাহানারার হয়ে সওয়াল করেছেন আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

অতীতে তিন বার গ্রেফতার হয়েছেন জাহানারা। প্রথম বার ২০২০ সালে। এক কেজি হেরোইন পাচারের অভিযোগে। এর পর ২০২৩ সালে আবার গ্রেফতার হন ৩০ কেজি গাঁজা পাচারের মামলায়। তার পর গত বছর, ২০২৪ সালে সাত কেজি গাঁজা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল জাহানারাকে। ওই তিন মামলাতেই জামিনে মুক্ত জাহানারা। তিনি জামিনে ছাড়া পাওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় তাঁকে ‘আগাম আটক’ করে এনসিবি।

হাই কোর্টে তদন্তকারী সংস্থার যুক্তি, জাহানারাকে আগাম আটক সম্পূর্ণ বৈধ। ওই মহিলা তাঁর এলাকায় মাদক পাচারচক্রের মূলচক্রী এবং অভ্যাসগত অপরাধী। আগের তিন মামলায় জামিনে মুক্ত হলেও, তিনি আবার মাদক পাচারচক্রে জড়িয়ে পড়তে পারেন, এই সন্দেহেই তাঁকে আটক করা হয়েছে। জাহানারাকে তাঁর এলাকার জেলে রাখা হলে, সেখানে বসেও তিনি মাদক পাচারের কারবার চালিয়ে যেতে পারেন। সে কারণে তাঁকে ঝাড়খণ্ডের জেলে রাখা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা এ-ও বলে, আদালত এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কেন্দ্রের বিশেষ ক্ষমতাবলে আগাম আটক করা হয়েছে।

পাল্টা হাই কোর্টের ডিভিশন বে়ঞ্চের পর্যবেক্ষণ, কেউ ভবিষ্যতে অপরাধ করতে পারেন, তা আগাম গ্রেফতারির ভিত্তি হতে পারে না। আগাম গ্রেফতারি ব্যক্তিস্বাধীনতার উপর আঘাত। এটা তখনই করা যায়, যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বড় প্রমাণ থাকে। তা-ও বিরল ক্ষেত্রে। মাদক পাচারের অভিযোগে বড় প্রমাণ থাকলে এনডিপিএস আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা হতে পারে। তার জন্য আগাম আটকের প্রয়োজন হবে কেন? প্রশ্ন তোলে আদালত।

জাহানারাদের মুক্তির নির্দেশ দিয়ে হাই কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, অভ্যাসগত অপরাধের কোনও প্রমাণ নেই। শুধু আবার অপরাধ করতে পারেন, এই সন্দেহে আটকের কোনও আইনি ভিত্তি নেই। এর জন্য শক্ত প্রমাণ দরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement