গরু পাচার রুখতে হবে, কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

সীমান্তে গরু, আফিম এবং সোনা পাচার এ বার কড়া হাতে বন্ধ করতে চাইছে রাজ্য সরকার। এবং সেই কাজে কোনও রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, তা সোমবার বিধানসভায় স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৫
Share:

সীমান্তে গরু, আফিম এবং সোনা পাচার এ বার কড়া হাতে বন্ধ করতে চাইছে রাজ্য সরকার। এবং সেই কাজে কোনও রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, তা সোমবার বিধানসভায় স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

দুই বাংলার সীমান্তে অনুপ্রবেশের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের অভিজ্ঞতা হল, কাঁটাতারের বেড়া টপকে আকছার গরু পাচার চলছে এ পার থেকে ও পার বাংলায়। তারই সঙ্গে আফিম এবং সোনা পাচারকে কেন্দ্র করে অসাধু কার্যকলাপ বাড়ছে এ রাজ্যে। সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় গোষ্ঠী সংঘর্ষ তথা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সে-ও এক বড় কারণ। তার মোকাবিলায় দিন তিনেক আগেই উত্তর ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে গরু পাচার বন্ধে জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরের দিন অর্থাৎ গত শনিবার দলের নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকেও দলীয় নেতৃত্বকে এই ধরনের পাচার রোধে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পর এ দিন বিধানসভায় পুলিশ বাজেটের জবাবি বক্তৃতায় মমতা বলেন, ‘‘একটা কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চাই, গরু পাচার, আফিমের কারবার, সোনার কারবার এই তিনটে জিনিস বন্ধ করবই। এ কাজ যে গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণ, জাত বা রাজনৈতিক দল করুক না কেন, কোনও রকম অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না।’’

সীমান্তে এ ধরনের কার্যকলাপকে কেন্দ্র করে আদতে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা যে বিঘ্নিত হচ্ছে, তা বুঝিয়েই মমতা বলেন, ‘‘অন্যায় অন্যায়ই। দুর্নীতি দুর্নীতি। আমার দলই হোক, বা কংগ্রেস, সিপিএম, কাউকেই দুর্নীতি নিয়ে খেলতে দেব না।’’

Advertisement

বস্তুত, গরু ও বেআইনি পাচারকে ঘিরে পেট্রাপোল বা মুর্শিদাবাদ সীমান্তে ইদানীং বেশ কয়েক বার গোলমালের ঘটনা ঘটেছে। এমনকী এই পাচার চক্রের মাধ্যমে জঙ্গি অনুপ্রবেশের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেন না গোয়েন্দা কর্তারা। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বার্তার নেপথ্যে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। সীমান্ত-সুরক্ষার বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন হলেও বিরোধী দলগুলি বিশেষ করে বিজেপি-র অভিযোগ, এ ধরনের পাচারে রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের নেতাদের মদত ও যোগসাজস রয়েছে। গরু পাচার বন্ধের দাবি জানিয়ে সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় মেরুকরণের রাজনীতিতেও সক্রিয় রাজ্য বিজেপি। প্রশাসনের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, সেই কথা মাথায় রেখেই পাচার বন্ধ করতে এত কঠোর মনোভাব নিচ্ছেন মমতা।

সীমান্তের অনুপ্রবেশ সমস্যার সঙ্গে এই ধরনের পাচার ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে বলেও এ দিন ইঙ্গিত দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তো সব জায়গায় নেই! স্বাধীনতার পর এত দিনেও কেন হয়নি জানি না।’’ নবান্ন সূত্রের মতে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজেও এ বার গতি আনতে চান মুখ্যমন্ত্রী।

মমতার জবাবি বক্তৃতা অবশ্য শুধু পাচার সমস্যা মোকাবিলায় সীমিত ছিল না। গত পাঁচ বছরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে এ দিন দাবি করেছেন মমতা। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অপরাধমূলক ঘটনার সংখ্যার বিচারে আমরা ২০১১সালে দেশের মধ্যে ১১ নম্বর স্থানে ছিলাম। এখন অপরাধের সংখ্যা কমে ২৪ নম্বরে (সংখ্যা বেশির অর্থ মানোন্নয়ন) এসেছি। গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, তামিলনাডু এমনকী দিল্লির থেকেও এ রাজ্যের অবস্থা ভাল। একই সঙ্গে বাম জমানার সঙ্গে তাঁর সরকারের তুলনা করে মমতা বলেন, ‘‘২০০৬ থেকে ২০১০ সালে এ রাজ্যে ১০ হাজার ৭৪৭টি ধর্ষণ হয়েছিল। ২০১১ থেকে ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৭৫৯টি।’’ মহিলাদের উপর অত্যাচার, আক্রমণের অভিযোগও কমেছে বলে পুলিশমন্ত্রী মমতা দাবি করেন। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, এই জমানায় অপরাধমূলক ঘটনার বহু অভিযোগ থানা-পুলিশ গ্রহণ করতেই অস্বীকার করে! খাতায় কলমের হিসাব ধরলে, হয়তো ক’দিন পর দেখা যাবে, এ রাজ্যে কোনও অপরাধই হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন