সঞ্জীবনী দেবনাথ।
অবসর পেলেই গল্পের বই নিয়ে বসে পড়া বরাবরের অভ্যাস। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনির চরিত্রদের অনুভূতিতে ভারাক্রান্ত হতে ভাল লাগে। ‘পথের পাঁচালি’ হাতে নিলেই অপু-দুর্গা কড়া নাড়ে ওর মনের দরজায়। তবে শুধু গল্প নয়, চারপাশের মানুষের অসহায়তাও সারাক্ষণ ভাবিয়ে তোলে কোচবিহারের সঞ্জীবনী দেবনাথকে।
বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায় মাধ্যমিকে রাজ্যের প্রথম স্থানাধিকারী সঞ্জীবনী। ডেঙ্গিতে গত বছরের মৃত্যুমিছিল, এ বার নিপা ভাইরাস নিয়ে মানুষের অসহায় আতঙ্কে ভাবিত স্থানীয় সুনীতি অ্যাকাডেমির এই ছাত্রী। তার কথায়, “হয় চিকিৎসক হব। নতুবা চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা করব। সেটাই আমার লক্ষ্য।” তবে রাজ্যে প্রথম হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সে ভাবেনি কোনওদিন। এই ফল হবে সেটাও সে ভাবেনি। ভাবেননি তার বাবা-মাও। বাবা পঙ্কজ দেবনাথ কোচবিহার কলেজের অধ্যক্ষ। মা সীমা দিনহাটা হাইস্কুলের শিক্ষিকা। পঙ্কজবাবুর কথায়, “উত্তরবঙ্গের থেকে কেউ প্রথম হয়েছে শুনছিলাম। বুকের ভিতরটা কেমন অস্থির লাগছিল। তারপর ওর নামটা শুনে ছুটে টিভির সামনে যাই। আর একটু হলে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম!” সঞ্জীবনীর মায়ের কথায়, “ও খুব ভাল রেজাল্ট করবে এটা আশা ছিল। তবে প্রথম হবে ভাবিনি।” কথায় কথায় জানালেন, এদিন সঞ্জীবনীকে ফোন করে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উচ্ছ্বসিত সঞ্জীবনীর স্কুল সুনীতি অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষিকা মণিদীপা নন্দী বিশ্বাসও। বললেন, “মনে মনে আমরা আগে থেকেই ভেবেছিলাম, সঞ্জীবনী রাজ্যে ভাল স্থান পাবে। আগামিদিনে সে আরও সফল হবে।”
তবে যাকে নিয়ে এত উচ্ছ্বাস, ফল জানার পরেও সেই সঞ্জীবনীকে কিছুটা সংযতই দেখিয়েছে। বাবা-মা জানালেন, টিভিতে নিজের নামটা শোনার পর অনেকটা সময় ধরে চুপ করে ছিল সে। সঞ্জীবনীর নিজের কথায়, “কেমন যেন হচ্ছিল! আনন্দটা ঠিক বোঝাতে পারব না।”
দিনহাটা রোডে নিউ কদমতলার কাছে বাড়িতে বসে সঞ্জীবনী জানাল, সাত জন গৃহশিক্ষক ছিল তার। স্কুলের শিক্ষিকারাও খুব সাহায্য করেছেন। গল্পের বইয়ের পাশাপাশি গান শুনতে ও গাইতে ভালবাসে সঞ্জীবনী। সব মিলিয়ে পেয়েছে ৬৮৯। বাংলায় ৯৮, ইংরেজিতে ৯৭, অঙ্কে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৯, জীবনবিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৯৮ এবং ভূগোলে ৯৮। তার বাড়ি যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়।