অপেক্ষা: সোমবার জলপাইগুড়ি ফার্মাসি কলেজে টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নিতে ভোর থেকে লাইন। নিজস্ব চিত্র
দার্জিলিং জেলায় করোনার সংক্রমণ নিয়ে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের বেশিরভাগই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। ১৭ এপ্রিল থেকে গত রবিবার পর্যন্ত জেলায় চিকিৎসাধীন অন্তত ২৮৫ জন রোগী মারা গিয়েছেন সরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমগুলো মিলিয়ে। তার মধ্যে ২০০ জনের বেশি মারা গিয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালেই। রবিবার রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আরও ১২ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে।
এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরাও। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে মৃতদের তালিকায় দুই শিশুও রয়েছে। একজন দেড় মাসের, অপর জন ৯ দিনের। চিকিৎসক এবং জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশ রেমডেসিভিরের মতো প্রাণদায়ী ওষুধের সরবরাহে ঘাটতির কথাও জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক, নার্সের সংখ্যা সেই মতো না বাড়লে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়ার সমস্যার কথাও উঠে এসেছে কয়েকজনের কথায়। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কোভিডের চিকিৎসার জন্য ২৫ জন বাড়তি চিকিৎসক চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগের অনুমতি দিলেও চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। সে কারণে পরিষেবার দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা যে হচ্ছে, তা চিকিৎসকদের অনেকেই জানান। এ ব্যাপারে হাসপাতাল সুপার সঞ্জয় মল্লিককে ফোন করা হলে তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। মেসেজ করা হলেও উত্তর মেলেনি।
কর্তৃপক্ষের একাংশের মতে বিভিন্ন জেলায় করোনার সংক্রমণ নিয়ে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে অনেকের অবস্থা সঙ্কটজনক হলে তাঁদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হচ্ছে একেবারে শেষ অবস্থায়। একই রকম ভাবে নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রচুর খরচ হওয়ায় শেষ অবস্থায় অনেক রোগীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আনা হচ্ছে। সেজন্যেই এখানে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা বেশি। তবে রোগীর পরিবারের অনেকে সেই যুক্তি মানতে রাজি নন। তাঁদের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই রোগীদের চিকিৎসায় নজরদারির অভাবও রয়েছে। সম্প্রতি সেখানে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অনেকে হাসপাতাল থেকে রোগীকে নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছেন।
স্বাস্থ্য দফতরের উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক তথা ওএসডি সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘আগাম চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে যখন শারীরিক অবস্থার অনেকটাই অবনতি হচ্ছে, তখন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অনেক রোগীকে। মৃতদের একটা বড় অংশকে সে কারণেই বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।’’
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে বর্তমানে ২১৬টি শয্যা। হাতে গোনা কয়েকটি শয্যা কখনও খালি হলেও বেশির ভাগই বাকি সবই রোগী ভর্তি থাকছে। অব্যবস্থার জন্য ভর্তি রোগীদেরও নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। কিছু ক্ষেত্রে অক্সিজেন পেতে দেরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ। রোগীদের কয়েকজন জানান, পানীয় জল পর্যাপ্ত মিলছে না। ওয়ার্ডের মধ্যে মৃতদেহ দীর্ঘ সময় ধরে পরে থাকায় সমস্যা হচ্ছে।