বিয়েতে রক্তদানের আমন্ত্রণ

আলিপুরদুয়ার জেলার কামাখ্যাগুড়ির শিববাড়ি রোডে বছর ৩৩-র যুবক অমিতের বাড়ি। শিলিগুড়িতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন তিনি। মাস খানেক আগে কোচবিহারের রসিকবিলের সোমা সাহার সঙ্গে তাঁর বিয়ের দিন ঠিক হয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিয়ে আর প্রীতিভোজ ১০ মার্চ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০৭:৩০
Share:

আহ্বান: বিয়ের কার্ডেও রক্তদানের নির্ঘণ্ট। নিজস্ব চিত্র

কারও রক্তের প্রয়োজন রয়েছে শুনলেই, নিজে সব সময়ই ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করেন। দিন বা রাত, সময় বা অসময়ের কোনও পরোয়া করেন না। এবার অন্যদেরও রক্তদানে সচেতন করতে, নিজের বিয়ের প্রীতিভোজের দিন বাড়িতে-ই রক্তদান শিবির করার ব্যবস্থা করলেন কামাখ্যাগুড়ির যুবক অমিত দে। কার্ডে বিয়ের নির্ঘণ্টের পাশাপাশি, রক্তদান শিবিরের নির্ঘণ্টও ছাপিয়ে আত্মীয়, পরিজন, বন্ধুদের ওইদিন রক্তদানের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন অমিত।

Advertisement

আলিপুরদুয়ার জেলার কামাখ্যাগুড়ির শিববাড়ি রোডে বছর ৩৩-র যুবক অমিতের বাড়ি। শিলিগুড়িতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন তিনি। মাস খানেক আগে কোচবিহারের রসিকবিলের সোমা সাহার সঙ্গে তাঁর বিয়ের দিন ঠিক হয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিয়ে আর প্রীতিভোজ ১০ মার্চ। তবে অমিত অনেক আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন প্রীতিভোজের দিন বাড়িতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করবেন। পরিকল্পনা মতো, তাই বিয়ের প্রীতিভোজের দিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছেন তিনি। বিয়ের কার্ডেও রক্তদান শিবির নিয়ে বিস্তারিত বিবরণও লিখে দিয়েছেন তিনি।

বর্তমানে রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতে তৈরি একটি সংগঠনের সঙ্গে অমিত যুক্ত রয়েছেন বলে জানালেন। তাঁর কথায়, “একটা সময় দেখেছি, ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত বাবার জন্য রক্তের খোঁজ করতে কীভাবে চারিদিকে ছুটে বেড়াতে হয়েছে আমার এক বন্ধুকে। আসলে আমাদের গ্রামীণ এলাকায় অনেকেই রক্ত দিতে ভয় পান। কিন্তু ওই ঘটনার পর, যখন যাঁর রক্তের দরকার হয়েছে ছুটে গিয়েছি। নিজে রক্ত দিয়েছি, নয়তো জোগাড় করেছি। তাই এলাকার মানুষকে সচেতন করতে নিজের বিয়েতেও রক্তদান শিবির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

Advertisement

পাত্রী সোমা বলেন, “দুই বাড়ির মধ্যে যখন আমাদের বিয়ে নিয়ে কথা চলছিল, তখনই অমিত তার এই পরিকল্পনার কথা আমায় জানিয়েছিল। আমার তো শুনে খুবই ভাল লেগেছিল। রক্তের জন্য এখনও অনেককে হন্যে হয়ে ছুটতে দেখি। তাই ওর এই উদ্যোগ খুব ভাল লাগে আমার। ওই দিন আমারও রক্ত দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।”

অমিতের বিয়ের কার্ড পেয়ে আত্মীয়, পরিচিতদের অনেকেই তাঁকে ওই দিন রক্ত দেওয়ার ব্যাপারে কথা দিয়ে রেখেছেন। অমিতের কথায়, “খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি। অনেকেই রক্ত দিতে চাইছেন।” অমিত যে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তার সম্পাদক রাজা বৈদ্য বলেন, “আমরা চাই অমিতের মতো, আরও অনেকেই এই ভাবে এগিয়ে আসুন।”

অমিতের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার চিন্ময় বর্মণ বলেন, “উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রচারটা এমনভাবে করতে হবে যাতে, সেদিন অনেকে রক্তদান করেন।” হাসপাতালের কর্তাদের একাংশের কথায়, এমন সামাজিক অনুষ্ঠানে অনেক সময়ই গাড়ি, লোক পাঠানো হলেও, রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ খুব বেশি দেখা যায় না। তবে এ ক্ষেত্রে আমন্ত্রিতদের সাড়া এবং প্রতিক্রিয়ায় তেমনটা হওয়ার সম্ভবনা কম বলেই মনে করছেন অমিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন