প্রতীকী ছবি।
দালালদের দৌরাত্ম্যে বেশি টাকা দিয়েও রক্ত জোগাড় করতে পারেননি। রক্তের অভাবে মৃত্যু হয় অসুস্থ মায়ের।
চোখের সামনে এ ভাবে মাকে মরতে দেখে এক কলেজ পড়ুয়া শপথ নেয়, কারও জীবনে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেবেন না তিনি। যে কোনও মূল্যে এমন পরিস্থিতি ঠেকানোর চেষ্টা করবেন। রক্তদানে মানুষকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি দালালরাজের বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের সচেতন করার ওই লড়াইয়ে বন্ধুদেরও পাশে পান ওই কলেজ পড়ুয়া। শুরু হয় তাঁর নতুন লড়াই। এমনই কাহিনির প্রেক্ষাপটে টেলিফিল্ম তৈরি করলেন কোচবিহারের একদল যুবক।
কেউ কলেজ পড়ুয়া। কেউ চাকরিজীবী। ব্যবসায়ীও কেউ কেউ। এই ‘বন্ধুদের’ সম্মিলিত প্রয়াসে তৈরি হয়েছে ‘বাঁচবে অনেক প্রাণ’। শুক্রবার কোচবিহারে আনুষ্ঠানিকভাবে টেলিফিল্মটি মুক্তি পায়। উদ্যোক্তাদের দাবি, খুব তাড়াতাড়ি মিনিট পনেরোর ওই টেলিফিল্মটি ইউ টিউবে আপলোড করা হবে। দেখানো হবে বিভিন্ন রক্তদান শিবিরে। রক্তদান নিয়ে বিভিন্ন প্রচার শিবিরেও এটি দেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। লক্ষ্য একটাই, ‘অপূর্ব’র মতো অভিজ্ঞতা কারও যেন না হয়।
পথিকৃৎ গোষ্ঠীর কর্তা তথা টেলিফিল্মের ডিরেক্টর বিক্রম শীল বলেন, “গল্পের ছলে আমরা বাস্তব সমস্যাটা তুলে ধরতে চেয়েছি। রক্তের জন্য মরণাপন্ন রোগীর আত্মীয়দের যে হেনস্থার মুখে পড়তে হয় তাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশাকরি টেলিফিল্মটি সামাজিকভাবেও কাজে আসবে।”
স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য ওই টেলিফিল্মটির ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাদের বক্তব্য, দালালদের দৌরাত্ম্যের জেরে রক্ত জোগাড় করতে না পেরে রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমন কোনও ঘটনা তাঁদের নজরে নেই। এরকম কোনও অভিযোগও পাননি তাঁরা। বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, রক্ত নিয়ে ব্যবসার চক্র রয়েছে কোচবিহারেও। ব্লাড ডোনার অর্গানাইজেশনের এক কর্তাদের দাবি, দালালচক্র রুখতে একাধিকবার প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা। ওই অর্গানাইজেশনের সম্পাদক রাজা বৈদ বলেন, “আমরা তো এমনটাই চাই। এ দিন সংস্থার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে টেলিফিল্মটির শুভমুক্তি হয়। ছবিটি ভাল লেগেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও আমরা সাংগঠনিকভাবে সেটি প্রচার করব। যাতে সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল হয়।” কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ওই টেলিফিল্মের ব্যাপারে জানা নেই। দেখিওনি। তাই এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।”
উদ্যোক্তারা জানান, কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকায় টেলিফিল্মটির শ্যুটিং হয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে ছবিটির পরিকল্পনা করা হয়। তবে তার বাস্তবায়ন হয়েছে। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবির গঙ্গোপাধ্যায় (অপূর্ব) । স্বপন ভৌমিক, সপ্তর্ষি বণিক, গৌরব গুহ ( বন্ধু), বীরাজ নারায়ন দাস ( চিকিৎসক) সহ বেশ কয়েকজন।
এবিএন শীল কলেজের ছাত্র সপ্তর্ষি বলেন, “টেলিফিল্ম বলে নয়, কোনও সামাজিক বার্তা দেওয়ার এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। তাই ব্যাটারি নামের এক যুবকের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই।”