সালিশির পরে মিলল ঝুলন্ত দেহ

ময়নাগুড়ির সাপ্টিবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দেমদেমির ডাঙার ঘটনা। এদিন ভোরে বাড়ির সামনে তাঁকে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন প্রতিবেশীরা। খবর যায় ময়নাগুড়ি থানায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৮ ০১:৫২
Share:

সুকুমার বর্মন

দুর্ঘটনায় আহতকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫ হাজার টাকা দেন এক গাড়িচালক। রাতে সালিশি সভায় সেই টাকা দিয়ে বাড়ি ফেরার পর বুধবার ভোরে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল সুকুমার বর্মন (২৭) নামে ওই যুবকের। তাঁর পরিবারের দাবি, ক্ষতিপূরণ নিয়ে আহতের পরিবারের হুমকির চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক।

Advertisement

ময়নাগুড়ির সাপ্টিবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দেমদেমির ডাঙার ঘটনা। এদিন ভোরে বাড়ির সামনে তাঁকে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন প্রতিবেশীরা। খবর যায় ময়নাগুড়ি থানায়। পুলিশ এসে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়। এই ঘটনায় পুলিশের কাছে এখনও কোন অভিযোগ জমা না পড়লেও যুবকের পরিবার ও তাঁর বন্ধুদের অভিযোগ, সামান্য একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় সালিশি সভা বসে। সেই সভার আগে ও পরে ক্রমাগত টাকার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল সুকুমারকে। চাপ সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। যদিও আহতের পরিবার কোনও সালিশি সভার কথা স্বীকার করেনি। তাদের বক্তব্য, ওই রাতে কোনও চাপ সুকুমারকে দেওয়া হয়নি। তিনি নিজের ইচ্ছায় চিকিৎসার টাকা দিতে এসেছিলেন।

জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার চা পাতা বোঝাই করে ফেরার সময় সুকুমারের নিজের ছোট মালবাহী গাড়ির ধাক্কায় আহত হন স্থানীয় বৈরাগীপাড়ার বাসিন্দা ভূপেন্দ্রনাথ বর্মন। ধাক্কায় তাঁর একটি পায়ে চিড়ও ধরে বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, ওই দুর্ঘটনার জন্য সুকুমারকে দায়ী করে প্রথমে এক লক্ষ টাকা জরিমানা দাবি করে আহতের পরিবার। অত টাকা তাঁর দেওয়ার ক্ষমতা নেই বলে জানালে সুকুমারের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। তাতেও সুকুমার রাজি হননি। শেষে দর কষাকষি করে তাঁকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রবিবার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও দেরি হওয়ায় হুমকি ফোনও আসতে থাকে সুকুমারের কাছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় টাকা ও কয়েকজন প্রতিবেশীকে সঙ্গে করে আহতের বাড়িতে যান সুকুমার। সেখানে প্রথমে সালিশি সভা বসিয়ে ২৫ হাজার টাকা তাঁরা সুকুমারের কাছ থেকে নিয়ে নেন। সালিশি সভা থেকে রাত ১২টা নাগাদ বাড়ি ফেরেন সুকুমার। রাতে গাড়ির মালপত্র বাঁধার একটি মোটা দড়ি বের করে বাড়ির কাছে চা বাগানের দিকে চলে যান তিনি। এ দিন সেখানেই একটি গাছে তার ঝুলন্ত দেহ মেলে।

Advertisement

সুকুমারের এক বন্ধু সুভাষ রায় বলেন, ‘‘ও আত্মহত্যা করার মতো ছেলেই নয়। আমরা চাই ওর মৃত্যুর ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক।’’ এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য নিলীমা অধিকারী বলেন, ‘‘আমি ওই সালিশি সভায় যাইনি। তাই কী হয়েছে বলতে পারব না।’’ আহত ভূপেন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘ছেলেটি আমাদের পরিচিত। তাই নিজেদের মধ্যে বসে বিষয়টিকে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এখানে হুমকি বা চাপ দেওয়ার কোনও বিষয়ই ছিল না।’’ ময়নাগুড়ি থানার আইসি নন্দকুমার দত্ত বলেন, ‘‘এ ধরনের কোনও অভিযোগ থানায় জমা পড়েনি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হিসেবেই ঘটনাটিকে দেখছে পুলিশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন