Cooch Behar

রাজবাড়ির প্রাঙ্গনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ঘিরে দিনভর তরজা, জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে রাতে আন্দোলন উঠল কোচবিহারে রাজবাড়িতে

কোচবিহারের সাধারণ মানুষের কাছে ঐতিহ্যশালী রাজবাড়ি মন্দির বা মসজিদের তুলনায় কোনও অংশে কম নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:৫৯
Share:

অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে রাজবাড়ির প্রাঙ্গনে। —নিজস্ব চিত্র।

রাজবাড়ির সামনে রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক মহোৎসব ঘিরে দিনভর উত্তপ্ত রইল কোচবিহার। রাজবাড়ির সামনে দিনভর ধর্নায় বসেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েসনের সদস্যরা। অনুষ্ঠান বাতিল না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ চলবে বলে জানিয়ে দেন তাঁরা। তা নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক তরজাও। কেন্দ্রীয় সরকার যেহেতু অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে, তাই তৃণমূলের লোকজন ইচ্ছাকৃত ভাবে আন্দোলনকারীদের তাতিয়ে তুলছেন বলে অভিযোগ করে বিজেপি। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এবং আন্দোলনকারীরা যদিও সেই অভিযোগ খারিজ করে দেন। শেষ মেশ জেলাশাসক এবং পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে রাত ৯টা নাগাদ আন্দোলন ওঠে।

Advertisement

কোচবিহারের সাধারণ মানুষের কাছে ঐতিহ্যশালী রাজবাড়ি মন্দির বা মসজিদের তুলনায় কোনও অংশে কম নয়। কোনও ভাবে যাতে তার সৌন্দর্য নষ্ট না হয়, সেখান গড়ে ওঠা পরিযায়ী পাখিরা যাতে আশ্রয়হীন না হয়, সে দিকে কড়া নজর তাঁদের। কিন্তু রাজবাড়ীর সামনের প্রাঙ্গনে এই অনুষ্ঠানে মানুষ ভিড় করলে, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কা করে শুরু থেকেই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে আসছে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন। তাদের যুক্তি ছিল, অনুষ্ঠান করার জন্য অনেক জায়গা রয়েছে। বেছে বেছে রাজবাড়ির প্রাঙ্গনই কেন?

অনুষ্ঠান বাতিলের দাবি নিয়ে সেই মতো শনিবার সকালে রাজবাড়ির সামনে ধর্নায় বসেন সংগঠনের সদস্যরা। সংগঠনের আহ্বায়ক সদস্য গিরিজাশঙ্কর রায় বলেন, ‘‘রাজবাড়ির পবিত্রতাকে এ ভাবে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। অনুষ্ঠান বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব আমরা।’’ সংগঠনের নেতা বংশীবদন বর্মণ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার নয়, ঐতিহ্যের এই রাজবাড়ির মালিক কোচবিহাবাসী। আমরা কোনও দলের হয়ে বিক্ষোভ করতে আসিনি। রাজবাড়ির মধ্যে এই ধরনের অনুষ্ঠান মানার প্রশ্নই ওঠে না। প্রয়োজনে রাজবাড়ির সামনে শুয়ে থাকব। আমাদের শরীর ডিঙিয়ে অনুষ্ঠান করতে হবে।’’

Advertisement

কিন্তু এই বিক্ষোভের পিছনে তৃণমূলের উস্কানি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিজেপি-র জেলা সভানেত্রী মালতি রাভা রায়। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেটার সমর্থকদের উস্কানি জোগাচ্ছে। এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা চলছে। অনুষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত। তাই তৃণমূল চাইছে না কোচবিহারে এমন কোনও অনুষ্ঠান হোক।’’ কেচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক আবার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজবাড়ির সামনে যাঁরা বিক্ষোভ করছেন, তাঁরা আসলে তৃণমূলের দলদাস। ২৩ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে যদি অনুষ্ঠান হতে পারে, তাহলে কোচবিহারে কেন নয়? এতে প্রাসাদের কোনও ক্ষতি হবে না। বরং গোটা দেশের সামনে কোচবিহারের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হচ্ছে।’’

তবে এই বিক্ষোভের সঙ্গে দলের কোনও সংযোগ নেই বলে পাল্টা দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়। তিনি বলেন, ‘‘এই আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের কোন যোগ নেই। একটা স্বতন্ত্র সংগঠন আন্দোলন করতেই পারে। এখানে তৃমমূলের কোনও ভূমিকা নেই। তবে ভোটের আগে এমন অনুষ্ঠান করে মানুষের মন পাওয়া যায় না। যে ধরনের বড় মাপের অনুষ্ঠান রাজবাড়ী ভিতরে করা হচ্ছে, তাতে রাজবাড়ির ভিতরে থাকা প্রচুর পরিযায়ী পাখির বসবাসের পরিবেশ নষ্ট হবে। ক্ষতি হবে রাজবাড়ির সৌন্দর্যের। রাজবাড়ি ছাড়া অন্য কোনো জায়গায় অনুষ্ঠান করাই যেত।’’

দু’দলের মধ্যে এই টানাপড়েন চলাকালীন এদিন রাতে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন জেলাশাসক এবং স্থানীয় পুলিশ। অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের উপস্থিত থাকার কথা। তাঁর নিরাপত্তার খাতিরে আন্দোলনকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করেন তাঁরা। ভবিষ্যতে এই ধরনের অনুষ্ঠানে অনুমতি দেওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয় সকলকে। তার পরই আন্দোলনকারীরা রাজবাড়ির সামনে থেকে সরে যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন