বন্ধের শিলিগুড়ি শহর। নিজস্ব চিত্র।
প্রথম থেকেই বিরোধীদের ডাকা বন্ধ ব্যর্থ করতে সক্রিয় ছিল রাজ্য সরকার। সরকারি স্তরে সমস্ত পরিষেবা চালু রাখতে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। এমনকী জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে মাইক নিয়ে প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল পুলিশকে। রাস্তায় যান চলাচলের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সক্রিয়তার প্রভাব পড়লেও, শিলিগুড়ির কোনও বাজারেই এদিন দোকানপাট খোলেনি।
হিলকার্ট রোড থেকে সেবক রোড, বর্ধমান রোড থেকে স্টেশন ফিডার রোড, সমস্ত রাস্তার দোকানগুলি এদিন বন্ধ ছিল। বিধান মার্কেট, হকার্স কর্নার, শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের সিংহভাগ দোকানই এদিন খোলেনি। কোনও রকম ঝুঁকিতে যেতে চান না বলেই দোকান খোলেননি বলে জানান বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। অনেকেই জোর করে বনধ ব্যর্থ করার উদ্যোগের নিন্দা করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতেই তাঁরা মাইকে প্রচার করেছিলেন।
শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসি (সদর) ও জি পাল বলেন, ‘‘বনধের দিন কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তাই সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রচার করা হয়েছিল।’’ কেউ যদি স্বেচ্ছায় কাজ করতে চান তাঁর যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয় সেটা নিশ্চিত করাই তাঁদের লক্ষ্য ছিল বলে তিনি জানান। পুলিশের পক্ষ থেকে বন্ধে দোকানপাট খোলা রাখা ও ব্যবসা চালু রাখার অনুরোধ জানানো হয় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কাছে।
শিলিগুড়ি হার্ডওয়্যার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি প্রদ্যুম্ন সিংহ চহ্বনের দাবি, ‘‘রাজ্যে এখন অনেক কম বন্ধ হয়। তাই ব্যবসায়ীদের উপরে কোনও চাপ দিইনি। কেউ সমর্থন না করলেও আমাদের কিছু বলার ছিল না। সরকারি আশ্বাস থাকলেও তাতে খুব একটা ভরসা পাইনি।’’ ভরসা পাননি নর্থ বেঙ্গল টি প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরাও। তবে পরের দিন মে দিবসে বাগান বন্ধ থাকবে। তাই বড় বাগানগুলিতে কাজ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে তরাই ডুয়ার্স মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার ছোট বাগান এদিন বন্ধ ছিল বলে সংগঠনের সভাপতি তথা সিআইআইয়ের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রবীর শীল জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক কাঠামোয় কেউ বনধ ডাকতেই পারে। তা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বা জোর করে ব্যর্থ করার চেষ্টা দুটোকেই আমরা সমর্থন করি না।’’
উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিত দাস বলেন, ‘‘আমরা ব্যবসায়িক সংগঠন। আমাদের নীতি অনুযায়ী আমরা কাউকে ব্যবসা বন্ধ করতে বলিনি। কেউ নিজে থেকে বন্ধ রাখলে তা ওই ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত মত।’’ নিরাপত্তার অভাব বোধ করাতেই দোকান খোলেননি বলে মন্তব্য করেছেন বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রতাপচন্দ্র দে। তিনি বলেন, ‘‘বন্ধের দিনে কোনওরকম নিরাপত্তা থাকে না। পুলিশ-প্রশাসন আশ্বাস দিলেও অনেকেই দোকান খুলতে চান না। তাছাড়া কর্মচারীরাও বেশিরভাগই আসেন না।’’ তাই ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করার চেয়ে বন্ধ রাখাই শ্রেয় বলে মনে করছেন তাঁরা।
এদিন হিলকার্ট রোডের বিস্তীর্ণ এলাকার দোকান বন্ধ ছিল। হিলকার্ট রোড ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিজয় গুপ্ত মনে করেন, সরকারি আশ্বাসেও ব্যবসায়ীরা ভরসা পাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বনধের দিন কোনও ক্ষতি হলে তা বিমার আওতায় পড়ে না। তাছাড়া সরকার কোনও ক্ষতিপূরণ দেবে বললেও তাতে আমাদের আস্থা খুব কম।’’ বন্ধ যেমন চান না। তেমনি বন্ধ ডাকা হলে তা বলপ্রয়োগে ব্যর্থ করারও তাঁরা বিপক্ষে বলে তিনি জানিয়েছেন। স্টেশন ফিডার রোড, খালপাড়ার পাইকারি বাজার এদিন ছিল সুনশান। ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের সংগঠন শিলিগুড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্য নির্বাহী সদস্য ওমপ্রকাশ অগ্রবাল দাবি করেন, ‘‘অতীতে কয়েক ঘন্টার বন্ধে ঝুঁকি নিয়ে অনেক সময় বড় ধরণের ক্ষতি হয়েছে। তাই কেউই ঝুঁকি নেননি।’’