প্রতিবাদে: ভোলারডাবরিতে নাবালিকাকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে পথনাটক। বুধবার আলিপুরদুয়ারে। এ দিন মিছিল হয় কালচিনিতেও। ছবি: নারায়ণ দে
অভিযোগ দায়ের করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার পরেও ক্ষোভে ফুঁসছে আলিপুরদুয়ার। বুধবার দিনভর প্রতিবাদে মুখর ছিল শহর। অভিযুক্তদের আদালতে তোলার সময় পুলিশের গাড়ি ঘিরেও চলে তুমুল বিক্ষোভ৷
সোমবার রাতে কিশোর প্রেমিকের সঙ্গে ভোলারডাবরির সুবর্ণপুর এলাকায় গিয়েছিল ১৬ বছরের ওই নাবালিকা৷ অভিযোগ, তখন তাদের পথ আটকায় কয়েক জন যুবক৷ এ ভাবে কেন ঘুরতে বের হয়েছে, এই প্রশ্ন তুলে তাদের দশ হাজার টাকা চাওয়া হয়। তার পর নাবালিকাকে তাদের সঙ্গে বসে মদ খাওয়ার প্রস্তাব দেয় ওই যুবকরা৷ অভিযোগ, এই দুই প্রস্তাবের কোনওটিতেই তারা রাজি না হওয়ায় অভিযুক্তদের কয়েক জন কিশোরকে আটকে রেখে তার সামনেই কিশোরীকে ধর্ষণ করে৷
মঙ্গলবার সকালে ওই নাবালিকা তার দাদাকে ঘটনাটি জানাতেই গোটা বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়৷ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের পর ওই নাবালিকাকে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ সেখানেই এই মুহূর্তে তার চিকিৎসা চলছে৷ জেলার পুলিশকর্তারা দীর্ঘক্ষণ নাবালিকার সঙ্গে কথা বলেন৷ বিকেলে ঘটনাস্থলে তদন্তে যান খোদ পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ৷ রাতে নাবালিকার কিশোর প্রেমিকের সঙ্গেও কথা বলে পুলিশ৷ এর পরই অভিযুক্তদের খোজে জোড় তল্লাশি শুরু হয়৷
তার পর থেকে পুলিশি অভিযানে বুধবার সকালের মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আরও দুজন এখনও অধরা৷ এসপি বলেন, ‘‘ধৃত চার জনই এই ঘটনায় জড়িত৷’’
এর পরেও অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের দাবিতে এবং ধর্ষণের প্রতিবাদে এ দিন দিনভর বিক্ষোভ চলে শহরে। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের তরফে পৃথক ভাবে মিছিল করা হয়৷ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে করা হয় সই সংগ্রহ৷ দুপুরে কলেজ হল্টের সামনে বেশ কয়েকটি সংগঠন মিলে বেশ কিছুক্ষণের জন্য পথ অবরোধও করে৷ বিকেলে পথনাটিকা হয়।
ঘটনাটি নিয়ে শহরজুড়ে প্রতিবাদ চলতে থাকায় ধৃতদের আদালতে তুলতেও বেগ পেতে হয় পুলিশকে৷ পুলিশের গাড়ি ঘিরে যুব কংগ্রেস কর্মীরা তুমুল বিক্ষোভ দেখান৷ অভিযুক্তদের গাড়ি থেকে নামাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনীতির ছোঁয়াও লেগে গিয়েছে৷ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানুষের মন পেতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ডান-বাম সব পক্ষই৷ বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে মিছিল বের করে তৃণমূল৷ যে মিছিলে হাঁটেন জেলা সভাপতি মোহন শর্মা ও বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী৷ হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলেন সৌরভ৷ বিকেলে মিছিল করে বামেরাও৷ বিজেপি আবার এসপি-র কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ঘটনায় প্রকৃত দোষীরা যাতে গ্রেফতার হয়, তার দাবি তোলে৷ দলের নেতা জয়ন্ত রায় বলেন, ‘‘এই ঘটনায় শাসকদলের অনেকেই জড়িত৷ পুলিশেওর একটা অংশ তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে৷’’ সৌরভ আবার বলেন, ‘‘ধর্ষকদের একটাই পরিচয়, তারা ধর্ষক। তা ছাড়া আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি অভিযুক্তদের কারও সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই৷’’