মারধরের ঘটনার পরও শিক্ষা নেয়নি পুলিশ

মাত্র আট দিনের ব্যবধান। তার মধ্যেই ফের ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটল ধূপগুড়িতে। কাজের সূত্রে বাইরে থেকে গ্রামে ঢোকা চার মহিলাকে সোমবার ডাউকিমারিতে আটকে রেখে যে ভাবে মারধর করা হয়েছে, তাতে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০২:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

মাত্র আট দিনের ব্যবধান। তার মধ্যেই ফের ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটল ধূপগুড়িতে। কাজের সূত্রে বাইরে থেকে গ্রামে ঢোকা চার মহিলাকে সোমবার ডাউকিমারিতে আটকে রেখে যে ভাবে মারধর করা হয়েছে, তাতে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

অভিযোগ, ছেলেধরা গুজবকে কেন্দ্র করে এর আগে ক্রান্তির গণরোষের ঘটনা এবং তারপর গত ১৬ জুলাই বারোঘড়িয়াতে এক মহিলাকে মারধরের ঘটনার পরও শিক্ষা নেয়নি পুলিশ। যার জেরে ধূপগুড়ির আশেপাশের গ্রামগুলিতে একের পর এক ছেলেধরার গুজব ছড়ালেও তা রুখতে তারা ব্যর্থ। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, এক মহিলাকে মারধরের ঘটনায় ইতিমধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই মহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি উঠেছে। পুলিশের দাবি, যারা ছেলেধরা গুজব ছড়াবে তাদের কোনও ভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, ছেলেধরার গুজবের জেরে এই মুহূর্তে ফেরিওয়ালারা তো বটেই গ্রামে গঞ্জে সাধারণ মানুষও ঢুকতে পারছেন না। অপরিচিত কাউকে দেখলেই তাঁকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন মানুষ।

Advertisement

ধূপগুড়ি সাঁকোয়াঝোরা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতকুমার দে বলেন, ‘‘থেকে থেকেই গ্রামে ছেলে ধরার গুজব ছড়াচ্ছে। একদিন দুপুরে গুজব ছড়াল গ্রামের একটি ছেলে চুরি হয়েছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আমার স্কুল লাগোয়া একটি প্রাইমারি স্কুলে অভিভাবকরা ছুটে আসেন। দেখলাম, পাগলের মতো ক্লাসে ঢুকে তাঁরা তাঁদের বাচ্চাদের খুঁজতে লাগলেন। একজন ভয়ে অজ্ঞানও হয়ে গেলেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘এ সব গুজব কড়া হাতে বন্ধ করা উচিত প্রশাসনের।’’ ধূপগুড়ির একটি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয় বসাক বলেন, ‘‘ছেলেধরার গুজবে গ্রামীণ স্কুলগুলিতে ছাত্রদের উপস্থিতিও কমে গিয়েছে। বিশেষ করে ছোট ছোট পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা।’’

সোমবার ছেলেধরার গুজবে ধূপগুড়ির ডাউকিমারিতে যে চারজন মহিলাকে মারধর করা হয় তাঁদের মধ্যে এক মহিলার অভিযোগ, মারার আগে তাকে বিবস্ত্র করে সারা শরীর তল্লাশি করা হয়েছে। বারোঘড়িয়াতেও মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলার শাড়ি টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হয়। ধূপগুড়ির সিপিএম নেতা জয়ন্ত মজুমদার বলেন, ‘‘ক্রান্তির ঘটনার পরই প্রশাসনের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। গ্রামগুলিতে শান্তি রক্ষা কমিটি গড়ে এলাকার মানুষকে গুজব আটকানোর দায়িত্ব দিতে হত। পুলিশকেও গ্রামে ঢুকে প্রচার চালাতে হত। তা করা হয়নি।’’

ধূপগুড়ির বিজেপি নেতা কৃষ্ণ দেব রায় বলেন, ‘‘ছেলেধরা গুজব আটকাতে পুলিশ ব্যর্থ। কারণ এধরণের গুজব ছড়ালে শাসক দলের অনেক লাভ।’’ ধূপগুড়ির তৃণমূল নেতা রাজেশ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘বিজেপির জেলা সম্পাদিকা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বারোঘড়িয়ায় মানসিক ভারসাম্য মহিলাকে নির্যাতন করেছেন। প্রশাসন ও পুলিশকে অস্থির করে তুলতে সব জায়গায় এধরণের গুজব ছড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন