শিশুকে রক্ত দিলেন ফৌজি

হাসপাতালে দু’দিন ধরে ভর্তি থাকলেও রক্ত মেলেনি রক্তাল্পতায় আক্রান্ত তিন মাসের শিশুর। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে এ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত না থাকায় সমস্যায় পড়েন পরিজনেরা।

Advertisement

  বাপি মজুমদার 

চাঁচল শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৯ ০৪:৩৬
Share:

দাতা: রক্ত দিচ্ছেন জওয়ান মহম্মদ জুলফিকার। নিজস্ব চিত্র। ইনসেটে শিশু পূজা দাস। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে দু’দিন ধরে ভর্তি থাকলেও রক্ত মেলেনি রক্তাল্পতায় আক্রান্ত তিন মাসের শিশুর। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে এ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত না থাকায় সমস্যায় পড়েন পরিজনেরা। শিশুর পরিজনদের হন্যে হয়ে ঘুরতে দেখে তাঁদের এক জনের ফোন নম্বর দেন হাসপাতালেরই এক নিরাপত্তারক্ষী। ফোন করার আধঘণ্টার মধ্যেই মিটল সমস্যা। মালদহের চাঁচল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে তিন মাসের পূজাকে রক্ত দিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ান মহম্মদ জুলফিকার।

Advertisement

ইদের ছুটিতে বাড়ি এসেছেন বিমানবাহিনীর জওয়ান জুলফিকার। তিনি বলেন, ‘‘একটা শিশুর আমার রক্তে প্রাণ বাঁচল, উৎসবের আনন্দের পাশাপাশি এটাও কম আনন্দের নয়।’’

মালদহের চাঁচল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে রক্তের সঙ্কট এখনও অব্যাহত। নির্বাচনের আগে থেকেই হাসপাতালে রক্ত সঙ্কট চলছে। কানপুরে কর্মরত চাঁচলের হারোহাজরা এলাকার জওয়ান দুলফিকার ইদের ছুটিতে বাড়ি এসে একটি গ্রুপের মাধ্যমে পুজার রক্তের প্রয়োজনীয়তার কথা জানতে পারেন। যুবশক্তি নামে ওই গ্রুপের মাধ্যমে এ দিন হাসপাতালে প্রয়োজনীয় রক্ত পেয়েছেন আরও এক বৃদ্ধা।

Advertisement

চাঁচল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যেটুকু রক্ত থাকে তা প্রাধান্যের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। প্রসূতিদের ক্ষেত্রেই প্রয়োজনটা বেশি। এই পরিস্থিতিতে রক্ত সঙ্কট মেটাতে যাঁরা এগিয়ে আসছেন, তাঁদের যত প্রশংসাই করা হোক তা কম হবে।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সবক’টি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে ১১ জুন সভা ডাকা হয়েছে। এলাকায় যাতে রক্তদান শিবির করা হয় সেই বিষয়ে তাদের উদ্যোগী হতে বলা হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতরের তরফে প্রচারও চালানো হচ্ছে, রক্ত নিতে হলে একজন দাতাকে নিয়ে আসতে হবে।

কিন্তু সকলের পক্ষে দাতা যোগাড় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। যেমন হরিশ্চন্দ্রপুরের নসরপুরের পূজা। বাবা উত্তম দাস ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। অসুস্থ পূজাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পিসি ললিতা দাস। কিন্তু রক্ত যোগাড় করতে না পেরে এ দিন হাসপাতালের বাইরে কান্নাকাটি শুরু করেন তিনি।

নিরাপত্তারক্ষী রহমান আলি বিষয়টি জেনে তাঁকে একজনের ফোন নম্বর দিয়ে ফোন করতে বলেন। পাশাপাশি তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থেকেও রক্ত পাননি চাঁচলের বসন্তপুরের সালেমা বিবি। উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যায় শরীরে আচমকাই রক্ত কমে গিয়েছিল। তাঁকেও এ দিন রক্ত দেন চাঁচলের আদর্শপল্লির জিন্না আলি।

১২৬ জনকে নিয়ে যুবশক্তি নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছেন চাঁচল মহকুমার কিছু যুবক। প্রয়োজনে যাতে তাঁরা সাহায়্য করতে পারেন তাই গ্রুপের বাইরেও হাসপাতালের কর্মীদের মতো অনেকের কাছেই নিজেদের ফোন নম্বর দিয়ে রেখেছেন তাঁরা।

উদ্যোক্তা মধ্যে অন্যতম বাবু সরকার, ইমরান আলি, অভিষেক আগরওয়ালরা জানালেন, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নিজেদের সাধ্যমতো পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন