তাঁর বিদ্রোহের জেরে টানাপড়েন চলছে শিলিগুড়ি পুরসভায়। সেই কংগ্রেস কাউন্সিলর সুজয় ঘটককেই মেয়রের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখে নতুন করে জল্পনা তৈরি হল শহরে।
রবিবার দলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের সাংসদ তহবিলের টাকায় পুরসভার হাতে শবদেহ বহনের গাড়ি তুলে দেওয়া হয়। সেই মঞ্চে মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সুজয়বাবুও।
তাঁদের দলের কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দে বৈষম্য নিয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন সুজয়বাবু। ৩ নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা চেয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন। যদিও তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করা হয়নি বলে মেয়র অশোক ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন। শিলিগুড়ি পুরসভা চালাতে কংগ্রেসের সমর্থন জরুরি অশোকবাবুদের। তাই সুজয়বাবুর অভিযোগ ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জেরে কিছুটা চাপে রয়েছেন তারা। তৃণমূলও সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই পুরবোর্ডকে চাপে রাখতে সচেষ্ট। এই পরিস্থিতিতে রবিবার একই মঞ্চে সুজয়বাবু এবং অশোকবাবুর উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। মেয়র দাবি করছেন, রাজ্যের কাছে পুরসভার পাওনা অর্থ আদায়ে কংগ্রেস তাদের পাশে রয়েছে। তিনি সে ব্যাপারে সাহায্য চাইলে প্রদীপবাবুরা সাহায্য করবেন বলেও ওই মঞ্চে জানিয়েছেন।
সুজয়বাবুর দাবি, ‘‘রবিবার দলের কাউন্সিলর সীমা সাহার ওয়ার্ডে ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার সঙ্গে অন্য কোনও বিষয়ের যোগ নেই। তা ছাড়া প্রদীপবাবু শবদেহ বহনের যে গাড়ি তুলে দিয়েছেন সেটা শহরের বাসিন্দাদের কাজে লাগবে। দলের কাউন্সিলরের ওয়ার্ডে এ ধরনের অনুষ্ঠানে না-থাকতে পারলেই বরং খারাপ হত।’’বরাদ্দে বৈষম্য নিয়ে পুরবোর্ডের সঙ্গে টানাপড়েন নিয়ে সুজয়বাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মেয়রকে চিঠি দিয়ে ইতিমধ্যেই জানিয়েছি তাঁদের রাজ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে। সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’
অশোকবাবু জানান, প্রদীপবাবুর সঙ্গে রবিবার তিনি কথা বলেছেন। কংগ্রেসের সাহায্য চেয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা মিটে যাবে বলেই আশা। বৈষম্যে নেই। সুজয়বাবুদেরও তা বোঝাতে চেষ্টা করছি। কংগ্রেস কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডেও উন্নয়ন করা হবে।’’
একই মঞ্চে থাকা নিয়ে পুরসভার বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকার জানান, ‘‘পুরবোর্ডের ব্যর্থতা নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি। সুজয়বাবুর অভিযোগ নিয়েও আমরা সমব্যাথী। পুরসভার সমস্ত জনপ্রতিনিধিদের কাছে আমাদের আহ্বান এই পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে সরব হন।’’
৪৭ আসনের পুরসভায় ২২টি আসনে জিতে এবং নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গড়ে বামেরা। অরবিন্দবাবু প্রয়াত হয়েছেন। তা ছাড়া ফরওয়ার্ড ব্লকের এক কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পুরবোর্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় বামেরা। তৃণমূলের ১৮ জন এবং বিজেপির ২ জন কাউন্সিলর রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের চার কাউন্সিলর পুরবোর্ডকে সমর্থনের কথা জানিয়েছিল। গত বোর্ড মিটিংয়ে কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে উন্নয়ন কাজের অর্থ বরাদ্দে বৈষম্যের অভিযোগ তোলেন সুজয়বাবুরা। সামনে পুরসভার বাজেট অধিবেশন রয়েছে। তার আগেই কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্যা না মেটালে বিপাকে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা।