রুপোলি-শস্য কোচবিহারের বাজারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
অনেকে দাবি করেন, বিদ্রোহ দমন করতে গুজরাতের উপকূলে এসে অজানা কোনও মাছ প্রচুর পরিমাণে খেয়ে ‘খেয়ালি রাজা’ বলে পরিচিত মহম্মদ বিন তুঘলকের মৃত্যু হয়েছিল। সৈয়দ মুজতবা আলি লিখেছিলেন, সেই মাছটি নির্ঘাত ইলিশ ছিল। ইলিশ দেখলে যে কোনও মানুষই নাকি বাহ্যজ্ঞান ভুলে যান। অনেকটা এমনই অবস্থা এখন উত্তরবঙ্গের বাজারে। চোখের সামনে রাশি রাশি ইলিশ। রোদে রুপো-রং ঠিকরে বের হচ্ছে। দামও মধ্যবিত্তের নাগালে। তায় আবার রবিবার। ইসলামপুর থেকে আলিপুরদুয়ার, মালদহ থেকে কোচবিহার বাজার থেকে কেউ ব্যাগ ভর্তি মাছ নিয়ে ফিরলেন। কেউ হাতে চকচকে ইলিশ ঝুলিয়ে ঢুকলেন পাড়ায়।
মালদহে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা ছাড় মিললেও মাংসের দিকে তাকাতেই রাজি নয় অনেকে। জেলা সদরের নেতাজি বাজার থেকে শুরু করে মকদমপুর বাজার সহ সব বাজারেই রবিবার ছিল ইলিশের দিন। যে বিক্রেতারা চারাপোনা বা বাটা মাছ নিয়ে বসে থাকতেন, তাঁরাও এ দিন ঝুড়ি উপচে ইলিশ নিয়ে বসেছেন। মাত্র ২০০ টাকা বা কেউ ৩০০ টাকা কেজি দরেও ইলিশ বিক্রি হয়েছে। বাড়ি থেকে মুরগি কিনবেন বলেই বাজারে এসেছিলেন রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা রতন সরকার। তিনি বললেন, “পাঁচশো গ্রাম ওজনের ইলিশ মাত্র তিনশো টাকায় যে পাব, তা ভাবতেই পারিনি। সামনে এমন ইলিশ দেখে মাংস কেনার লোক আমি নই। জোড়া ইলিশ কিনেছি।’’
চাঁচলের বাজারেও ইলিশ বিকোচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে। কোচবিহারে তো ইলিশ বিরিয়ানিও রান্না হয়েছে। ইদের উৎসবে শনিবার খাসির মাংস রান্না হলেও রবিবারে বাজারে ইলিশের প্রাচুর্য উৎসবের ভাগও কেড়েছে। কারও বাড়িতে ইলিশ ভাপা, কারও বাড়িতে ইলিশ পাতুরি তো কারও বাড়িতে সরষে ইলিশ। ২০০ টাকা কেজি থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে দেদারে বিক্রি হয়েছে ইলিশ। শুধু কোচবিহার বড় বাজারেই মাছ ঢুকেছে ছয় হাজার চারশো কেজি। ইলিশের দাপটে উধাও হয়ে গিয়েছে অন্য মাছ। ভবানীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী রাজেশ মাহাতো জানান, এ দিন ওই বাজারে চার ট্রাক ইলিশ মাছ ঢুকেছে। একটি ট্রাকে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ পেটি মাছ থাকে। প্রতি পেটিতে থাকে চল্লিশ কেজি। বালুরঘাটে অন্তত ১৫০০০ কেজি ইলিশ মাছ ঢুকে বালুরঘাটের মাছবাজার ভরিয়ে দিয়েছে।
দিন কয়েক আগে রাস্তা খানিকটা ভাল হওয়ার পরে ইলিশ মাছ ব্যাপক হারে আসতে শুরু করেছে।