ব্যাঙ্কে ডাকাতির পর প্রায় চার ঘণ্টা ধরে ছয় দুষ্কৃতী জাতীয় সড়কের পাশে লুঠের মালপত্র নিয়ে বসে ছিল। কিন্তু, বাগডোগরা পুলিশের নজরদারি ভ্যানের নজর কী করে এড়িয়ে গেল তা নিয়ে পুলিশ মহলেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রবিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি এবং ঝাড়খন্ডের সাহেবগঞ্জ থেকে ঘটনার জড়িত সন্দেহে দুই জনকে গ্রেফতার করে শিলিগুড়ি গিয়ে আদালতে পেশ করে। আদালত ধৃতদের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। ধৃতদের হেফাজত থেকে ১৩ লক্ষ টাকা এবং সোনার বালা উদ্ধার হয়েছে। বাকি লক্ষাধিক টাকা এবং প্রচুর সোনার গয়না নিয়ে ঘটনার জড়িত বাকিরা পালিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ডাকাতির ঘটনায় ছয় জন জড়িত ছিল বলে ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে। তাদের মধ্যে এক জন বাদে বাকিরা সকলেই ঝাড়খন্ডের সাহেবগঞ্জের বাসিন্দা। ধৃতেরা বাগডোগরার হোটেলে এবং বাকি চার জন জংশন এলাকার একটি হোটেলে ছিল। ঘটনার চার দিন আগে থেকে দলটি বাগডোগরায় দিনরাত ঘোরাফেরা করে ব্যাঙ্কের গেট, দরজা, জানলা সব দেখে গিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর থেকে আড়াইটা অবধি ব্যাঙ্কে অপারেশন চালিয়ে দলটি ভোর সাড়ে ছ’টা অবধি বিহার মোড় এলাকায় গিয়ে বসে। গামছা, তোয়ালে, ছোট ছোট ব্যাগে সোনা এবং টাকা রাখা ছিল। ভোরে রাস্তার পাশে ছ’জন বসে থাকলেও পুলিশের তা নজরে আসেনি। দু’জন বাসে মালদহের দিকে যায়। চার জন বাসে শিলিগুড়ি হয়ে এনজেপি হয়ে ট্রেনে করে গা ঢাকা দিয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশের একাংশ অফিসার জানিয়েছেন, ওই রাতে বিহার মোড় এলাকায় পুলিশের ভ্যান থাকলেও তা বিমানবন্দরের দিকে জাতীয় সড়কে টহল দেয়। পরে মোড়ের পাশেই গাড়িটি ভোর অবধি দাঁড়িয়ে থেকে সকালে থানায় ফিরে এসেছিল। জাতীয় সড়কের পাশে বাস-গাড়ি ধরতে থাকা সন্দেহভাজন লোকজনের কোনও জেরা হয়নি। সেদিকে নজরই দেওয়া হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা হল দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারির উত্তম হাজরা এবং ঝাড়খন্ডের সাহেবগঞ্জের রাধানগরের কামাল হোসেন। দুই জনের নামেই দিল্লি, ঝাড়খন্ড এবং ওড়িশায় একাধিক ডাকাতি, জাল নোটের মামলা রয়েছে।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘দলটিকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। বাকিদের সম্পর্কে তথ্য মিলেছে, তাদের খোঁজা হচ্ছে।’’ বাগডোগরা পুলিশ নিয়ে কমিশনারের বক্তব্য, ‘‘প্রতিটি থানাকে নজরদারি বাড়াতে বলেছি। বিশেষ করে জাতীয় সড়কের পাশে ব্যাঙ্ক, এটিএম, সোনার দোকানের উপর নজরদারি বেশি রাখতে বলা হয়েছে।’’
এদিনই বাগডোগরার আইন শৃঙ্খলা এবং পুলিশের নজরদারি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় থানায় স্মারকলিপি দিয়েছে সিপিএম। দলের জোনাল কমিটির তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসিপি-র কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। দলের জোনাল সম্পাদক শীতল দত্ত জানান, বাগডোগরা বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত।
পুলিশ সূত্রের খবর, মালদহের মানিকচক লাগোয়া ঝাড়খন্ডের সাহেবগঞ্জ এলাকায় দুষ্কৃতী দলটির ঘাঁটি রয়েছে। মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের কিছু যুবকও দলটিতে রয়েছে। দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কেরল, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমে দলটি সক্রিয়। পুলিশের অনুমান, অন্তত ১৫-১৬ কেজি সোনা, ৩০ লক্ষ টাকা লুঠ করা হয়েছে।