শয্যা ফাঁকা, চলে যাচ্ছেন রোগীরা

শুধু মেল মেডিসিনই নয়, রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে মালদহ মেডিক্যালের ফিমেল মেডিসিন, ফিমেল সার্জিক্যাল, মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডেও।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা 

মালদহ শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ০৭:০৩
Share:

বদল: আগে ঠাঁই হত না মেঝেতেও, এখন ফাঁকা পড়ে রয়েছে শয্যা। মালদহে মেডিক্যালের মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে শনিবার। নিজস্ব চিত্র

রোগীর ভিড়ে থিকথিক করত ওয়ার্ড। এক শয্যায় থাকত দু’জন রোগী। এমনকি, মেঝেতেও রোগী রেখে চলত চিকিৎসা। মঙ্গলবারও দিনভর এমনই ছবি ছিল মালদহ মেডিক্যালের ‘মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে’। শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ এই ওয়ার্ডেই দেখা গেল অধিকাংশ শয্যাই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই ওয়ার্ডে ৮১টি শয্যা রয়েছে। আর রোগীর সংখ্যা ৭২।

Advertisement

শুধু মেল মেডিসিনই নয়, রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে মালদহ মেডিক্যালের ফিমেল মেডিসিন, ফিমেল সার্জিক্যাল, মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডেও। শয্যা ফাঁকা কেন? প্রশ্ন শুনেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠলেন মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার বাসিন্দা ইব্রাহিম শেখ। তিনি বলেন, “শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগা সত্তরোর্ধ্ব বাবাকে নিয়ে তিন দিন ধরে কার্যত বিনা চিকিৎসায় এখানে পড়ে রয়েছি। দিনে দু’বার ডাক্তার এলেও নির্দিষ্ট কোনও আসার সময় নেই। শরীর খারাপ হয়ে গেলে বারবার নার্সদের মাধ্যমে জানালেও ডাক্তাররা আসছেন না। আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ বলে এখানেই পড়ে রয়েছি। অনেকে রোগী নিয়ে চলে যাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালে।”

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ভাইকে হাসপাতাল থেকে ছুটি করিয়ে নিয়ে এ দিন দুপুরে বেসরকারি নার্সিংহোমে চলে যান বৈষ্ণবনগর থানার খেজুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা পিন্টু হালদার। তিনি বলেন, “ভাইয়ের রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্ত জোগাড়ও করা হয়েছে। কিন্তু ডাক্তাররা চিকিৎসা না করে ফেলে রেখে দিয়েছেন রোগীকে। কাঠের কাজ করে সংসার চালাই। অর্থসঙ্কট থাকলেও রোগীকে বাঁচাতে হাসপাতাল থেকে নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি। চোখের সামনে তো ভাইকে বিনা চিকিৎসায় মরতে দেখতে পারব না।” সুপার তথা সহ অধ্যক্ষ অমিতকুমার দাঁ বলেন, “চিকিৎসকদের নিয়মিত ওয়ার্ডে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। পরিষেবা সুষ্ঠু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুর থেকে মেডিক্যালে আন্দোলন এবং কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। ফলে বহির্বিভাগে, অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা লাটে উঠে যায় বলে অভিযোগ। বুধবার থেকেই বহির্বিভাগে ঠিক মতো চিকিৎসা হচ্ছে না। অভিযোগ, এ দিন বহির্বিভাগে হাজির হননি কোনও চিকিৎসকই। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বহির্বিভাগে দুই থেকে তিন হাজার রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন। ফলে চিকিৎসক না থাকায় হয়রান হয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়-পরিজনদের। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের বাসিন্দা মঞ্জুরি বিবি বলেন, “সাত দিন আগে কানের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করিয়েছিলাম। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন কানের অস্ত্রোপচার করতে হবে। এ দিন কানের পরীক্ষা করিয়ে তার রিপোর্ট করিয়ে আনতে বলেছিলেন। ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে দু’বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে টাকা খরচ করে এলাম। আর বিনা চিকিৎসায় ঘুরে যেতে হল।”

এ দিনই হাসপাতাল পরিদর্শনে যান মালদহের জেলাশাসক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান কৌশিক ভট্টাচার্য। তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন। এমনকি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকও করেন। তিনি বলেন, “চিকিৎসকদের হাজিরা ঠিক রয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন