আবেদন: রাস্তায় বসেই ফর্ম ভর্তি চলছে। —নিজস্ব চিত্র।
আবেদন পত্র জমা দিলেই কি মিলবে দু’শো দিনের কাজ? সত্যিই কি দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা? সপ্তাহ তিনেক ধরে মালদহ জেলা প্রশাসনিক ভবনে কাজের জন্য আবেদন পত্র জমা দিতে আসা ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের মুখে মুখে ফিরত প্রশ্নগুলি। শুক্রবারও সকাল থেকে আবেদনপত্র জমা দিতে ভিড় জমান হাজার হাজার শ্রমিক। তবে এ দিন টাকা বা কাজ নিয়ে কোনও কিছু নিয়েই প্রশ্ন নেই তাঁদের। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, রাজস্থানে কি ফের খুন হয়েছেন মালদহের শ্রমিক?
প্রশাসনিক ভবন চত্বরে থাকা এক চা বিক্রেতা বলেন, “আবেদন করতে আসা মানুষগুলি শুধুমাত্র কাজ আর টাকা পাওয়া যাবে কি না, এতদিন তা নিয়েই আলোচনা করত। এ দিন সকাল থেকে চাঁচলে শ্রমিক খুন নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত তাঁরা।”
রাজস্থানে শ্রমিকের কাজে গিয়ে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছিলেন কালিয়াচকের আফরাজুল হক। সেই ঘটনার মাস দেড়েকের ব্যবধানে ফের সেই রাজস্থানেই খুন হন চাঁচলের বাসিন্দা সাকির আলি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই আতঙ্ক আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে জেলার শ্রমিকদের। কালিয়াচকের জালালপুরের বাসিন্দা সুলেমান মিঞা, শাহাজান শেখরা বলেন, “বাইরে কাজে গিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। তবুও একসঙ্গে হাজার হাজার টাকা পাওয়ার আশায় বাধ্য হয়েই কাজে যায় সবাই।”
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “আফরাজুল কাণ্ডের পর দৈনিক গড়ে দশ হাজার আবেদন পত্র জমা পড়ছে প্রশাসনিক ভবনে। ফের জেলার এক শ্রমিক ভিনরাজ্যে খুন হওয়ায় কাজের আবেদন করে ভিড় আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
আফরাজুল কাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের শ্রমিকদের ভিনরাজ্য থেকে ফিরে আসার ডাক দেন। এমনকী, কাজের সঙ্গে এককালীন ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। তার পর থেকেই ভিনরাজ্য থেকে বাড়ি ফেরার হিড়িক পড়ে যায়। সপ্তাহ তিনেক ধরেই হাজার হাজার শ্রমিক এককালীন ৫০ হাজার টাকা এবং দু’শো দিনের কাজ চেয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে ভিড় জমাচ্ছেন জেলা প্রশাসনিক ভবনে। সে ভিড়ে সামিল মহিলারাও। তাই পুরুষ এবং মহিলাদের আবেদনপত্র জমা নেওয়ার জন্য আলাদা কাউন্টারও করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন প্রায় ১১ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে। এখনও পর্যন্ত জমা পড়েছে মোট ৬০ হাজারেরও বেশি আবেদনপত্র। শুধু ভিনরাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকেরাই নয়, জেলার শ্রমিকেরাও ভিড় জমাচ্ছেন বলে দাবি প্রশাসনের কর্তাদের।