ফাইল চিত্র
চা বলয়ে লোকবল বাড়তে থাকায় এ যাবৎ খুবই উৎসাহী ছিলেন ডুয়ার্সের বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু, গো-বলয়ের ৩ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পরে ডুয়ার্সেও যেন কিছুটা ব্যাকফুটে তাঁরা। আপাতত সংগঠন বাড়ানোর পথে না হেঁটে শক্তি ধরে রাখাই লক্ষ্য বিজেপির। একই সঙ্গে চা বাগানে দলীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, রথযাত্রা, মন্দির, ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিয়ে বেশি হইচই না করাই ভাল এখন।
বিজেপির অন্দরের খবর, দলের একপক্ষ ভাবছেন, যা শক্তি সঞ্চয় হয়েছে সেটাই প্রথমে ধরে রাখার উপরে জোর দিতে হবে। অন্য পক্ষ অবশ্য সংগঠন বাড়াতে অন্য দল ভাঙানোর কাজ আগের মতোই চালাতে হবে বলে মত দিচ্ছেন। কিন্তু, বিজেপির ডুয়ার্সের অভিজ্ঞ নেতাদের অনেকেই ‘৩ রাজ্যের ফলের দিকে খেয়াল রেখে আগে ঘর সামলাতে হবে’ বলে নির্দেশ দিয়েছেন। ভোটের ফলের ধাক্কা কিছুটা সামলানোর পরে ফের অন্যের ঘর ভাঙার চেষ্টা করা উচিত বলে তাঁরা নিচুতলার নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন।
বীরপাড়া-মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘‘এখন আমাদের প্রথম লক্ষ্য, সংগঠনের যে শক্তি সঞ্চয় হয়েছে তা অটুট রেখে আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনটি যাতে দখল করা যায়, তা নিশ্চিত করা।’’ তাঁর আরও দাবি, এই আসনে যদি কংগ্রেসের ভোট বাড়ে, তবে তা যাবে তৃণমূলের ঘর থেকে।
তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি মোহন শর্মা বিজেপির বিধায়কের হিসেবকে ‘কাঁচা’ বলে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘চা বলয়ে কংগ্রেসের ধ্বজা তো আমাদের জন্যই টিঁকে ছিল। আমরাই তো এখন তৃণমূলে। তা হলে হিসেব মিলবে কী করে!’’ তাঁর দাবি, ৫ রাজ্যে ভোটের ফলের পরে অনেকে যোগাযোগ শুরু করেছেন বলেই জেলা বিজেপির কয়েকজন নেতা ঘর সামলানোর জন্য ব্লকে নির্দেশ পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন।
আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনটি একদা আরএসপির শক্ত ঘাঁটি ছিল। ২০১৪ সালেও আরএসপি-র মনোহর তিরকে সাংসদ ছিলেন। তাঁকে হারিয়েছেন তৃণমূলের দশরথ তিরকে। ব্যবধান ২৪ হাজার ভোট। সে যাত্রায় তৃণমূল ৩০ শতাংশ, আরএসপি ২৮ শতাংশ, বিজেপি প্রায় ২৮ শতাংশ ও কংগ্রেস ১০ শতাংশ ভোট পায়। পরে গত পঞ্চায়েত ভোটে দেখা যায়, প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে গিয়েছে বিজেপি।
এর পরে চা বলয়ের অনেক এলাকায় বাম-কংগ্রেসের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের একাংশ, আদিবাসী, নেপালি অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দাদের অনেকের বিজেপিতে সামিল হওয়ার ছবিও নিয়মিত দেখা গিয়েছে বলে কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি বিশ্বরঞ্জন সরকারও মানছেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে তৃণমূল বিরোধিতার জন্য বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু, ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে মঙ্গলবার রাত থেকেই। অনেকেই ঘরে ফেরার জন্য যোগাযোগ করছেন। আমাদের আর কমার কোনও জায়গা নেই। দেশের রাজনীতির মানচিত্র পাল্টাচ্ছে। আলিপুরদুয়ারে একটুও প্রভাব পড়বে না তা কি হয়!’’