BJP

BJP: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথের সামনে বাংলা ভাগের দাবি তুললেন বিজেপি বিধায়ক, বিতর্ক

গত বছর জুলাই মাসে একই দাবি তুলেছিলেন বার্লা। তখন অবশ্য রাজ্য বিভাজনের প্রস্তাব এক কথায় নাকচ করে দেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:১০
Share:

নিশীথের উপস্থিতিতেই বাংলা ভাগের দাবি তুললেন মালতি রাভা রায়।

পাশেই বসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। এ বার তাঁর সামনে বাংলা ভাগের দাবি জানালেন কোচবিহারের তুফানগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক মালতি রাভা রায়। এর আগে আলিপুরদুয়ারে বিজেপি সাংসদ জন বার্লাও উত্তরবঙ্গকে স্বাধীন রাজ্য ঘোষণা করার দাবি তুলেছিলেন। যা নিয়ে সে সময় সরগরম হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। পরে অবশ্য বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব রুখে দাঁড়ানোয় তা ধামাচাপা পড়ে যায়। বুধবার রাজবংশী বীর সেনাপতি চিলা রায়ের জন্মবার্ষিকীর কর্মসূচিতে আমন্ত্রিত হয়ে আবার সেই বাংলা ভাগের দাবি উস্কে দিলেন মালতি। তা-ও আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই।

Advertisement

‘দ্য গ্রেটার কোচবিহার পিপলস্ অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজবংশী নেতা অনন্ত মহারাজ আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে গিয়ে মালতি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ নিয়ে পৃথক রাজ্য ঘোষণার দাবি তো আমাদের রয়েছেই। এরই সঙ্গে আমাদের দাবি, বীর চিলা রায়ের কাহিনি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন চিলা সম্পর্কে কিছুই জানে না। ওঁদের জানাতে হবে যে, চিলা রায় শুধু কোচবিহার নয়, গোটা ভারতবর্ষের গর্ব।’’

গত বছর জুলাই মাসে একই দাবি তুলেছিলেন বার্লা। তখন অবশ্য রাজ্য বিভাজনের প্রস্তাব এক কথায় নাকচ করে দেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। দিলীপ ঘোষেরা জানিয়ে দেন, এ প্রস্তাব একান্তই বার্লার নিজস্ব। দলের এতে কোনও সায় নেই। কিন্তু তার পরেও বার্লা একাধিক বার বলেছেন, স্থানীয় মানুষের দাবি মেনে উত্তরবঙ্গ বিভাজনের প্রয়োজন রয়েছে। এ নিয়ে রাজ্য জুড়ে বিতর্কের আবহেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয় বার্লার। তখনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন নিশীথ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পরেও বার্লাকে আগের মতোই রাজ্য ভাগাভাগি নিয়ে সুর চ়ড়াতে দেখা গিয়েছে। বরং, সংযত থেকে সুকৌশলে বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে দেখা গিয়েছে নিশীথকে। বুধবারও নিশীথ বাংলা ভাগ নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও ‘কোচবিহারবাসীর মুক্তি’র কথা তাঁর ভাষণে উঠে এসেছে।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, মালতি আর নিশীথের আগেই অনন্তের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের ‘নারায়ণী সেনা’য় অনন্তের অনুগামী যুবকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণাও করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরেই মালতি বাংলা ভাগের দাবি তোলায় বিষয়টি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।

গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে দু’হাত ভরে সমর্থন দিয়েছিল অনন্তের গোষ্ঠী। যার উপর ভর করেই উত্তরবঙ্গে ভাল ফল করেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের পর অনন্তের সঙ্গে তৃণমূলের সখ্য এবং ‘মহারাজা’র আমন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রীর সাড়া দেওয়া বিজেপি-র পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্যের পুরভোটে এবং আগামী লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে এই ‘নয়া রাজনৈতিক সমীকরণ’ বড় প্রভাব ফেলতে পারে, এই আঁচ করেই হয়তো সুকৌশলে রাজ্য ভাগের দাবি উস্কে দেওয়া হল, এমনটাই মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। তাদের আরও ব্যাখ্যা, গত বছর বিধানসভা ভোটের আগে পৃথক কোচবিহার রাজ্যের পক্ষে অনন্তও সওয়াল করেছিলেন। অর্থাৎ, ঘুরিয়ে বললে, ‘সখ্য’ আটকাতে মমতা এবং অনন্ত দু’পক্ষকেই রাজ্য ভাগাভাগির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলেন বিজেপি বিধায়ক।

পৃথক রাজ্য নিয়ে মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘মালতির মাথা আবার খারাপ হয়ে গিয়েছে। পৃথক রাজ্যের দাবি আমরা মানছি না। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, যাঁরা এ রকম উস্কানিমূলক কথা বলবেন, তাঁদের গ্রেফতার করা হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন