(বাঁ দিকে) বিডিও অমিতকুমার চৌরাশিয়া। (ডান দিকে) বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গা। —নিজস্ব চিত্র।
ত্রাণ দিতে পক্ষপাতিত্ব করছেন বিডিও। এই অভিযোগ তুলে মাদারিহাট বিডিও অফিসে ঢুকে তাঁর টেবিল চাপড়ে তাঁকে তিরস্কার করলেন আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোজ টিগ্গা। আঙুল তুলে বিজেপি সাংসদ হুঁশিয়ারি দিলেন, ‘‘বিডিও হিসাবে কাজ করতে চাইলে বিডিও হয়ে কাজ করুন। তৃণমূল করতে চাইলে তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন।’’
সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু এলাকা। এখন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বটে, তবে সাধারণ গ্রামবাসীদের একাংশ প্রশাসনের ত্রাণবিলি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তোর্সার জলে বানভাসী পূর্ব খয়েরবাড়ি এলাকাতেও একই পরিস্থিতি। বিজেপির অভিযোগ, ত্রাণের আশায় সাধারণ মানুষ স্থানীয় বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যার কাছে গিয়েছিলেন। পঞ্চায়েত সদস্যা নিয়ম মেনে মাদারিহাটের বিডিওর কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিডিও তাঁকে ত্রাণের জন্য প্রধানের কাছে যেতে বলেন। এই ভাবে বেশ কিছু দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু ত্রাণ পাননি খয়েরবাড়ির বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন।
এখন আলিপুরদুয়ারের সাংসদের অভিযোগ, সকলেই যে ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এমনটা নয়। যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি বিজেপির সমর্থক, তারাই শুধু ত্রাণের জিনিসপত্র পাচ্ছেন না। একটা ত্রিপলের জন্য বার বার পঞ্চায়েত সদস্যের দরজায় ছুটতে হচ্ছে তাঁদের। ওই সমস্ত বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য গত বুধবার মাদারিহাটের বিডিও অফিসে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বিডিও অমিতকুমার চৌরাশিয়ার সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। যা নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
তৃণমূলের বক্তব্য, এক জন সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন বিজেপির জনপ্রতিনিধি, তা লজ্জাজনক। পাল্টা বিজেপির দাবি, সাধারণ মানুষের ‘স্বর’ হয়ে ওই প্রতিবাদ করেছেন সাংসদ। বস্তুত, ওই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, টেবিল চাপড়ে বিডিও-কে সংবিধান মেনে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিজেপি সাংসদ। বিডিও-কে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল করতে চাইলে তৃণমূলটাই করুন।’’
আপাত শান্ত স্বভাবের জন্য পরিচিত মনোজ। সেই তিনি বিডিওর সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলেছেন, তাঁকে আঙুল দেখিয়ে শাসিয়েছেন বলে অভিযোগ। এই বিতর্কে মনোজের বক্তব্য, বিডিও-কে অপমান করার উদ্দেশ্য ছিল না তাঁর। তিনি ন্যায্য দাবি তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, “মাদারিহাটের সাধারণ মানুষ, চা-শ্রমিকেরা বার বার বিডিওর কাছে গিয়েও সাহায্য পান না। আমাদের (বিজেপির) জনপ্রতিনিধিরা ওঁর অফিসে গেলে কোনও সহযোগিতা পান না। চা-বাগানের শ্রমিকেরা সাহায্য চাইতে গেলে বিডিও ‘না’ বলে দেন। এমনকি, আমাদের মাধ্যমেও একটা প্লাস্টিক (ত্রিপল) ওঁদের কাছে পৌঁছোতে দেন না। তাই আমরা গিয়েছিলাম, অভিযোগ জানাতে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওঁকে বলেছি, সরকারি চেয়ারে বসে যদি তৃণমূলের কাজ করেন, সেটা ঠিক নয়। প্রশাসনিক অফিসকে তাঁরা তৃণমূলের ব্লক অফিসে পরিণত করেছেন। উনি যেভাবে ব্যবহার করেছেন, আমরাও সেই ভাষাতেই জবাব দিয়েছি।”
পাল্টা আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশচিক বড়াইক টিগ্গাকে দুষতে গিয়ে বিতর্কিত কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি হিসাবে উনি যে ব্যবহার করেছেন, তাতে বোঝা যায়, উনি পাগল হয়ে গিয়েছেন। এর আগে আমরা দেখেছি কুমারগ্রামের বিধায়ক ৭০ বছরের এক বৃদ্ধকে ধাক্কা দিচ্ছেন। মনোজ যে কাজটি করেছেন তা অসাংবিধানিক।”
সাংসদের ব্যবহার নিয়ে বিডিও অমিতকুমারের বক্তব্য, মনোজ যা করেছেন, সবই প্রচারের জন্য। তাঁর অভিযোগের ভিত্তি নেই। বিডিও-র কথায়, ‘‘উনি লোকজন নিয়ে ভিডিয়ো করতে এসেছিলেন। প্রচারের দরকার ছিল। সেটা হয়ে যেতেই উনি চলে গিয়েছেন।’’ তাঁর দাবি, প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করছে। ত্রাণের কাজে কোনও রাজনীতি হয়নি।